জন্মদিনে কেমন ছিলেন, শিশু-কিশোরদের প্রিয় লেখক রাসকিন বন্ড

হিমাচলের মুসৌরি শহরে দেশ-বিদেশের অগণিত পাঠক, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে গত ১৯ মে পালিত হলো, ভারতবর্ষের জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক রাসকিন বন্ডের ৮৮তম জন্মদিন।

ব্রিটিশ দম্পতি অব্রে বন্ড ও এডিথ ক্লার্কের ঘর আলোকিত করে ১৯৩৪ সালের ১৯ মে হিমাচল প্রদেশের কাসাউলিতে জন্মগ্রহণ করেন রাসকিন। পিতার কর্মসূত্রে মুসৌরি, জামনগর, সিমলা, দেরাদুনসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কাটে তার শৈশব। লেখাপড়াটাও হয় এই ব্রিটিশ ভারতেই। ভারত স্বাধীনের পর জীবিকার জন্য তরুণ রাসকিন পাড়ি জমান পূর্বপুরুষদের ভিটে মাটি সুদূর বিলেতে; কিন্তু তার জন্মস্থান ভারতবর্ষ, ফেলে যাওয়া শৈশবের টান, বন্ধুদের স্মৃতি, হিমালয় পাদদেশের অপূর্ব নিসর্গের টান তাকে ফেরত নিয়ে আসে ভারত বর্ষের মাটিতে।

ইউরোপীয় মুখের গড়ন, ধমনীতে ইংরেজ পূর্বপুরুষদের রক্ত নিয়েও এই শিশুসুলভ মানুষটা বিলেত থেকে ফিরে চোস্ত ভারতীয় হয়ে কাটিয়ে দিলেন পরবর্তী আটান্নটি বছর। নিরলসভাবে লিখে গেছেন এতগুলো বছর, ভূষিত হয়েছেন পদ্মভূষণসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায়। 

খুব অল্প বয়েসে রাসকিন তার বাবাকে হারান, বিধবা মা গাঁট বাঁধেন নতুন সংসারের বন্ধনে। কেন তার বেশির ভাগ লেখা শিশুদের জন্য? এই প্রশ্নের জবাবে রাসকিন তার বাবা হারানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, কৈশোরের সেই তীব্র একাকিত্ব তাকে শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে তাড়িত করেছে। শিশু সাহিত্যের পাশাপাশি রাসকিন বড়দের জন্যও লিখে গেছেন। চির অকৃতদার এই মানুষটি দত্তক নিয়েছিলেন রাকেশ নামের এক শিশুকে। এখন তার জীবন কাটে রাকেশ, রাকেশের স্ত্রী বীণা ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে। জন্মদিনে রাকেশ জানান, তার বাবা এখনো প্রতিদিন লিখে যাচ্ছেন বিরতিহীনভাবে- তার শক্তিমান কলমে, ক্ষুরধার মেধায়। এখনো প্রতি বছর তার দুই-তিনটি করে বই ছাপিয়ে যাচ্ছেন। 

এই বছর তার জন্মদিনে প্রকাশিত হয় নতুন বই ‘হাউ টু লিভ ইয়োর লাইফ’। রাকেশ জানান, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় তার বাবা গত দুই বছরের মতো এ বছরও জন্মদিনের সব জনসমাগম বাতিল করেছেন। সেই শৈশব থেকেই দেরারুন, মুসৌরসহ হিমাচল অঞ্চলের পাহাড় বন আর নিসর্গের প্রতি রাসকিনের তীব্র অনুরাগ। ক্লান্তিহীন আরাধনায় সেই নিসর্গ আর জীবনের বাঁকের অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন তার শব্দের যাদুতে। রাতে ঘরে ফেরার সময় পথে দেখা, চাঁদের আলোয় খেলা করা শিয়ালের পালের নন্দধ্বনির সাথে মিশেছে তার আনন্দ, তা ফুটে উঠেছে তার কবিতার লাইনে। শৈশবে দেখা দেরারুনের জন্য প্রকাশ পেয়েছে তার তীব্র প্রেম। তিনি এখনো প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঝঞ্ঝাটহীন বাস করতে ভালোবাসেন, কখনো কোনো মুঠোফোন ছিল না তার। কোভিড প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতি শনিবার বিকেলে পর্যটন শহর মুসৌরীতে বেড়াতে আসা তার ভক্ত-পাঠকদের সঙ্গে সময় কাটাতেন কেমব্রিজ বুক স্টোরে। 

রাসকিন বন্ডের রচিত বিখ্যাত বইগুলোর নাম- ‘দ্য ব্লু আমব্রেলা’, ‘দ্য নাইট ট্রেন এট দিল্লি’, ‘দিল্লি ইজ নট ফর রাসকিন’, ‘আওয়ার ট্রি স্টিল গ্রো ইন দেহরা’, ‘টাইম স্টপ অ্যাট শ্যামলি’, ‘ আ ফেইস ইন ডার্ক অ্যান্ড আদার হান্টিং’, ‘কামিং এরাউন্ড দ্যা মাউন্টেন’, ‘এ সিজন অফ গোস্ট’। 

রসকিন বন্ডের লেখার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সিনেমাগুলো হলো- ‘জুনুন’, ‘দ্য ব্লু আমব্রেলা’, ‘সাত খুন মাফ’, ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’। ছোট বেলায় স্কুলে অভিনয়ে পুরস্কার পাওয়া রাসকিন জীবনে নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলেন। খুব অল্প বয়সে কলম ধরে ফেলায় যদিও নৃত্যশিল্পী আর হওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া তারই উপন্যাসের ওপর নির্মিত ‘সাত খুন মাফ’ সিনেমায় একটা অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন রাসকিন বন্ড। পর্দায় তার পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, নাসিরুদ্দীন শাহ, ইরফান খানসহ আরো বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত বলিউড অভিনয় শিল্পী। 

১৯৫৭ রাসকিন কমনওয়েলথের জন এল লেউলিয়েন রায়েস পুরস্কার লাভ করেন। রাসকিন শতাধিক গল্প, উপন্যাস, কাব্য গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯২ সালে ‘আওয়ার ট্রি স্টিল গ্রো ইন দেহরা’ এর জন্য তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার রাসকিন বন্ডকে ১৯৯৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১৪ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে।


[ইন্টারনেট অবলম্বনে লেখাটি তৈরিকৃত]

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //