হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ভাষাবিজ্ঞানী ও খ্যাতিমান লেখক, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১২ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে জার্মানির মিউনিখ শহরে তিনি মারা যান।

‘নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ করার মতো সাহসী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান হুমায়ুন আজাদ। তাকে বলা হয় স্রোতের প্রতিকূলে চলা সত্য ভাষ্যের এক অনন্য পথিক।

হুমায়ুন আজাদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের কামারগাঁয়ে নানা বাড়িতে। যেটি বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্গত। তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর।

১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় হুমায়ুন আজাদের। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি ঢাকায় ফিরে যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।

হুমায়ুন আহমেদের রাজনৈতিক লেখালেখি ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার সূচনা হয় আশির দশকেই। মূলত আশির দশকের শেষভাগ থেকে হুমায়ুন আজাদ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি খবরের কাগজ নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়ে সূচনা হয় তার রাজনৈতিক লেখালেখির।

ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কলম ধরার কারণে তার বই যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে, তার উপর আরোপ করা হয়েছে এক প্রকার অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা, এসেছে অবর্ণনীয় মানসিক এবং শারীরিক আঘাত। সেই উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে লেখার ফলে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় ফেরার পথে ঘাতকেরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে নেয়া হয় ঢাকার সিএমএইচে, পরে থাইল্যান্ডে চিকিৎসায় তিনি খানিকটা সুস্থ হন।

সেবছরই ৭ আগস্ট বিখ্যাত জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান তিনি। ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর হঠাৎ শরীর খারাপ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। যে মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী বইমেলা থেকে ফেরার পথে তার উপর সেই উগ্রবাদীদের হামলা।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী 

কবিতা: অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩), জ্বলো চিতাবাঘ (১৯৮০), সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে (১৯৮৫), যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল (১৯৮৭), আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে (১৯৯০), হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩), আধুনিক বাংলা কবিতা (১৯৯৪), কাফনে মোড়া অশ্রু বিন্দু (১৯৯৮), কাব্য সংগ্রহ (১৯৯৮), পেরোনোর কিছু নেই (২০০৪)।

কথাসাহিত্য: ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪), সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫), মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ (১৯৯৬), যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬), শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার (১৯৯৭), রাজনীতিবিদগণ (১৯৯৮), কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ (১৯৯৯), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু (২০০০), ফালি ফালি ক'রে কাটা চাঁদ (২০০১), শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা (২০০২), ১০,০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ (২০০৩), একটি খুনের স্বপ্ন (২০০৪), পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪)।

কিশোরসাহিত্য: লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬), ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫), কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী (১৯৮৭), আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৮৯), বুকপকেটে জোনাকিপোকা (১৯৯৩), আমাদের শহরে একদল দেবদূত (১৯৯৬), অন্ধকারে গন্ধরাজ (২০০৩), Our Beautiful Bangladesh (২০০৪)।

সমালোচনা: শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৮), ভাষা-আন্দোলন: সাহিত্যিক পটভূমি (১৯৯০), নারী (১৯৯২), প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে (১৯৯২), নিবিড় নীলিমা (১৯৯২), মাতাল তরুণী (১৯৯২), নরকে অনন্ত ঋতু (১৯৯২), জলপাই রঙের অন্ধকার (১৯৯২), রবীন্দ্র প্রবন্ধ/রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা (১৯৯৩), শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা (১৯৯৩), সীমাবদ্ধতার সূত্র (১৯৯৩), আধার ও আধেয় (১৯৯৩), আমার অবিশ্বাস (১৯৯৭), পার্বত্য চট্টগ্রাম : সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা (১৯৯৭), মহাবিশ্ব (২০০০), দ্বিতীয় লিঙ্গ (মূল: সিমোন দ্য বোভোয়ার) (২০০১), আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম (২০০৩), ধর্মানভূতির উপকথা ও অন্যান্য (২০০৪)।

ভাষাবিজ্ঞান: Pronominalization in Bengali (১৯৮৩), বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র (১৯৮৩), বাক্যতত্ত্ব (১৯৮৪), বাঙলা ভাষা (প্রথম খন্ড) (১৯৮৪), বাঙলা ভাষা (দ্বিতীয় খন্ড) (১৯৮৫), তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮), অর্থবিজ্ঞান (১৯৯৯)।

অন্যান্য: হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ (১৯৯২), সাক্ষাৎকার (১৯৯৪), আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (১৯৯৫), বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় (১৯৯৭), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা (১৯৯৭)। 

পুরস্কার ও স্বীকৃতি: একুশে পদক (২০১২)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //