এডেনে আর্তুর র‌্যাঁবো

ফাতিমা জনসন

১০ নভেম্বর ছিল ফরাসি কবি জাঁ নিকোলা আর্তুর র‌্যাঁবোর ১৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯১ সালে এই দিনে বিস্ময়কর তরুণ কবি ৩৭ বছরে বয়সে মারা যান। প্রতীকবাদী সাহিত্যের পুরোধাদের একজন জাঁ নিকোলা আর্তুর র‌্যাঁবো।

তিনি ছিলেন চির যাযাবর। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী এই কবি এতদিন পরও সমানভাবে বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁকে স্মরণ করে মারকায সাউথ পোর্টাল-এ  লন্ডনে বসবাসরত সাংবাদিক ফাতিমা জনসন সম্প্রতি ‘রেম্বু ফি আদন’ শিরোনামে আরবিতে একটি নিবন্ধ লেখেন।

সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশকালের পাঠকদের জন্য লেখাটি আরবি থেকে অনুবাদ করেন -মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

এডেন একটা বিখ্যাত শহর। এর মর্যাদা আরও উচ্চকিত হয়েছে একটি মানুষের জন্য। মানুষটি ছিলেন তকতকে, ঝকঝকে সুদর্শন। প্রখর ব্যক্তিত্ব তার। সবসময় বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন। মানুষটির নাম কবি নিকোলা জাঁ আঁর্তুর র‌্যাঁবো। তিনি এই এডেন শহরে একদা বাস করতেন। র‌্যাঁবো ১৮৫৪ সালে ফ্রান্সের শার্লভিল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

ফ্রান্সে তার জীবনকে সর্বোচ্চ সম্মানের একটি সাংস্কৃতিক আইকন করে তোলো হয়েছে, যেটা তার প্রাপ্য ছিল। প্রয়াত ইরাকি ভিন্নমতাবলম্বী রাজনীতিক ও কবি সাদি ইউসুফ ১৯৮১ সালে এক লেখায় লেখেন “আরব ও ফ্রান্সের সমস্ত কবি আর বুদ্ধিজীবী উভয় গোষ্ঠীর উচিত গোলাপ এবং ওয়াইন নিয়ে এডেনে যাওয়া। সম্মানের উদ্দেশ্যে বার্ষিক তীর্থযাত্রার অংশ হিসেবে র‌্যাঁবোর মূর্তির পায়ের নিচে উপহার হিসাবে সেগুলো অর্পণ করা। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”

এডেনের দিগুলিতে র‌্যাঁবো যে বাড়িতে থাকতেন তার সংস্কারের সময় ৫টি কফির বীজ পাওয়া গিয়েছিল। নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই কফি ফলগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যা ১৮৮০ সালে এডেনের সভ্যতা ও বিকাশ সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। (যে বছর র‌্যাঁবো এখানে এসেছিলেন তখন এর আরবি ধ্রুপদী নাম ছিল ওয়াদিমুন।) 

সর্বোপরি ‘কবিতা বাড়ি’ বা হাউস অব পোয়েট্রির একটি দেওয়ালে নাম অংকিত ছিল র‌্যাঁবোর বাড়ি বলে। অলংকৃত দেওয়ালে লেখা ছিল ক্যাফে শব্দটি। শব্দটির মধ্যে ৫টি কফির  চিত্র ছিল। এই ফলগুলি পরবর্তীতে সংগ্রহ করা হয়েছিল আর “ইডেন: র‌্যাঁবো’স হাউস এক্সিবিশন” শিরোনামের একটি প্রদর্শনীতে তার একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল।

‘ইডেন ইন্টারন্যাশনাল’ ছিল ফরাসি রপ্তানি সংস্থা বর্দি অ্যান্ড কোম্পানির আবাসস্থল, যার মধ্যে র‌্যাঁবো ছিলেন একজন কর্মচারী। পিয়ের ও আলফ্রেড বর্দি লিওনের ব্যবসায়ী ছিলেন। আর উত্তর ইয়েমেনের উঁচুমানের কফি চেরি ফ্রান্সে যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, তাতে তারা বিনিয়োগ করেছিলেন। ১৮৮০ সালে আবাদকৃত উত্তর ইয়েমেনের অর্ধেক কফির ফসল দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের মাধ্যমে মার্সেইতে পাঠানো হয়েছিল।

১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খোলার পর এই জাতীয় ব্যবসার সফলতার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। উত্তর ইয়েমেনের মোচা বন্দরটি ২০০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী কফি বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যকে সহজতর করার একটি কারণ ছিল দক্ষিণ ইয়েমেন উত্তর ইয়েমেন থেকে কফির ফল আমদানি করে তা বিশ্বের গভীরতম বন্দর এডেনের মাধ্যমে তা পুনরায় রপ্তানি করত।

এডেন মূলত সামুদ্রিক বাণিজ্যের মোক্ষম ক্ষেত্র। উনিশ শতকে এটি জাহাজ সরবরাহ আর মুক্ত-বাজার পণ্য পরিবহনের জন্য একটি প্রধান ও ব্যস্ত কেন্দ্র ছিল। 

কফি এডেনে পুনরায় রপ্তানি করার আগে, কফির বীজের জন্য একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো। এডেনে এই কাজটি করতেন র‌্যাঁবো। কফি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি তদারকির সময় একদল ভারতীয় শ্রমিককে তিনি পেয়েছিলেন। এ কাজগুলির আঞ্জাম দেওয়া হতো “র‌্যাঁবো’স হাউস” নামে পরিচিত বাড়ির অভ্যন্তরে। মূলত এটি ছিল একটি ইহুদি পরিবারের আবাসস্থল।

এটি লিজ নিয়েছিল বর্দি অ্যান্ড কোম্পানি। এটি কফি বাছাইয়ের একটি শক্তিশালী স্থান হয়ে ওঠে। কারণ র‌্যাঁবো বাড়িটিকে কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। লক্ষণীয় যে কফি বাছাই করার প্রক্রিয়াটি ছিল কঠিন আর এর জন্য উঁচুস্তরের বিশেষীকরণের প্রয়োজন ছিল এবং উনিশ শতকে ম্যানুয়ালি বা চালনি ব্যবহারের মাধ্যমে যেটা সম্পন্ন করতে হয়েছিল। এটি একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কফির বীজগুলি আকার ও আকৃতি অনুসারে গ্রেড করা হয়।

তদুপরি, কফি বীজগুলিকে এই সময়ে ভাজা ও স্বাদ নেওয়া হয় যাতে তাদের গুণমান অনুসারে কীভাবে গ্রেড করা হবে, যা বাজার মূল্যের সাথে সম্পর্কিত। আমরা কফি বাণিজ্যের এই গল্পে এডেনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতিগত মিশ্রণের প্রমাণ দেখতে পাই। আরও লক্ষণীয় যে র‌্যাঁবো সম্পর্কে বেশিরভাগ জীবনীকার বর্ণনা করেছেন ফ্রান্স ছেড়ে বিশ্বের অন্যত্র যাওয়ার পর এক পর্যায়ে তিনি শিল্পকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছিলেন। তাকে জীবনীকাররা “সক্রিয় পুঁজিবাদী” হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

যাই হোক, কফি সম্পর্কে এমন কিছু রয়েছে যা গভীরভাবে শৈল্পিক এই অর্থে যে কফি নিজেই একটি দীর্ঘ যাত্রার অংশ। আর কফি সত্যিকারের কফিতে পরিণত হওয়ার আগে, ফল বাছাইয়ের পরে এটি সবুজ চেরি থেকে গাঢ় বাদামি বীজে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যায়। আর ফলের ভেতরের বীজ দেখতে শিল্পীর হৃদয়ের মতো। আর সেই শক্ত বীজটি সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা হয়।

এমনকি র‌্যাঁবো ইউরোপের কফি শপগুলিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে নিজের মুখে কফির নমুনা পরখ করতেন। আরবি কাহ্‌ওয়া বা কফি নিজেই একটি গভীর যাত্রার সাথে যুক্ত, কারণ এটি উত্তর ইয়েমেনে একটি বিবর্তনীয় অর্থে ২০০০০ বছর আগে বেন কানফোরা এবং বেন ইউজেনয়েডস নামে দুটি ভিন্ন ধরনের বন্য ইথিওপিয়ান কফির মধ্যে মিলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছিল।

এত সুন্দর ইতিহাস এবং সাজানোর প্রক্রিয়ার জন্য পুঁজিবাদী, শ্রমঘন পেশার চেয়ে একজন চিন্তাশীল ও সংবেদনশীল ব্যক্তির প্রতিভা প্রয়োজন বলে মনে হয়। আসুন আমরা ভুলে না যাই যে কফি আসলে একটি কঠিন ওষুধ যা পানকারীদের সাহায্য করে এবং এটি একজন বিদ্রোহী কবির উপযুক্ত কাজ বলে মনে হয়।

আর এটিও সত্য যে বিদ্রোহী কবি র‌্যাঁবো এডেনে আসার পাঁচ বছর আগে ১৮৭৫ সাল থেকে সাহিত্য রচনা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যেটা র‌্যাঁবোর জীবনযাত্রার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্যগুলির একটি। তবে তিনি পরে আলফ্রেড ব্র্যাডলির সাথে তার কাজের সময়কে “হাস্যকর” ও “জঘন্য” বর্ণনা করে পরিত্যাগ করেছিলেন। র‌্যাঁবোর লেখক থেকে কফিশপ সুপারভাইজারে রূপান্তরটি অবর্ণনীয় বলে মনে হয়।

র‌্যাঁবোর জীবনীকাররা তার কাজের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন, যা সাহিত্য ছাড়া জীবন বেছে নেওয়ার তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিতে পারে। এটা কল্পনা করা কঠিন যে ইডেনে তার রহস্যময় উপস্থিতির চাবিকাঠি তার লেখার মধ্যে নিহিত। উদাহরণত, ১৮৭৩-১৮৭৫ সালের মধ্যে র‌্যাঁবোর দ্বারা রচিত গদ্য কবিতার একটি সংকলন তার ইলুমিনেশন-এ, তিনি লিখেছেন: “আমি বিজ্ঞানের মাস্টার।”

১৮৭২ সালের একটি গদ্য কবিতা “এ সিজন ইন হেল”-এর “দ্য ফেয়ারওয়েল” শিরোনামের একটি পর্বে র‌্যাঁবো লিখেছিলেন: “আমি একটি নরকের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যেটা মহিলারা খুব ভালো জানেন। এবং এখন আমি এক দেহে সত্য ও আত্মাকে ধারণ করতে সক্ষম হব।”

র‌্যাঁবোর মনোমুগ্ধকর কবিতা “রোম্যান্স”ও বিবেচনা করুন, যেখানে তিনি লিখেছেন: “যখন তোমার বয়স সতেরো, তুমি সত্যিই সিরিয়াস নও।” র‌্যাঁবো যখন ইয়েমেনে চলে আসেন, তখন তার বয়স ছিল পঁচিশ বছর। এই নিবন্ধের শুরুতে প্রকাশিত দ্বিতীয় ফটোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে যে র‌্যাঁবো ১৮৮০ সালের আগস্টে এডেনের হোটেল ইউনিভার্সের বারান্দায় বসে আছেন।

এই চিত্রটি উপরের প্রথম চিত্রের সাথে একেবারেই বিপরীত, যেখানে র‌্যাঁবোর প্রতি ইঞ্চিতে একটি নৃশংস, নির্যাতিত কিশোরকে দেখা যাচ্ছে অন্ধকার “জ্বলন্ত” চোখ ও মোটা চুলের সাথে। দ্বিতীয় ফটোতে, র‌্যাঁবোকে পরিপক্ব ও আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেখাচ্ছে, যেমনটি তার ঝরঝরে কাটা চুল, ছোট গোঁফ এবং সাদা শার্ট দ্বারা প্রমাণিত। এখানে তাঁর “রোম্যান্স” কবিতাটি উপলব্ধি করা হয়েছে, যেহেতু তিনি সতেরো বছর বয়সে পরিণত ছিলেন না, কিন্তু তিনি এডেনে পঁচিশ বছর বয়সে হয়েছিলেন।

দক্ষিণ ইয়েমেনের ইতিহাসের এক পর্যায়ে, র‌্যাঁবোর বাড়িটি একটি ফরাসি কনস্যুলেট, একটি গবেষণা কেন্দ্র, একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও একটি গ্রন্থাগার করার জন্য সংস্কার করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালের শুরুতে, র‌্যাঁবোর বাড়িতে বার্ষিক কবিতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যাঁবোর প্রতি শ্রদ্ধা ও নির্জলা প্রশংসা প্রথম আধুনিক কবিদের একজন হিসাবে তার মরণোত্তর খ্যাতি থেকে উদ্ভূত। র‌্যাঁবোর কবিতা ও চিন্তাভাবনার (তার লেখা চিঠিতে প্রকাশিত) প্রতিফলন এবং আত্মসচেতনতার তীব্র প্রচেষ্টা দ্বারা চিহ্নিত।

১৮৭১ সালে তিনি একবার এই বিস্ময়কর শব্দগুলো লিখেছিলেন: “আমি শেষোক্ত”তে। এখানে তিনি আত্মস্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেছিলেন এবং ফরাসি ঔপনিবেশিক প্রকল্পের সমালোচনা করেছিলেন। যখন তিনি তার কবিতা ‌‘ব্যাড ব্লাড’-এ‌ লিখেছেন: “শ্বেতাঙ্গরা নেমে যায়। কামান! এখন আমাদের নিজের ধান্ধা করা, পোশাক পরা আর কাজে যাওয়া উচিত।”

সর্বোপরি, র‌্যাঁবো তার সময়ের কাব্যিক প্রথাগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি তা নিয়ে প্যারোডি করতে ছাড়েননি। উদাহরণস্বরূপ, কবি রোমান প্রেমের দেবী ভেনাসের প্রশংসা করতে অস্বীকার করেছিলেন। পরিবর্তে, তিনি তাকে একটি কালশিটে গাধা ভাবছেন বলে কবিতায় লিখেছিলেন। বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও তিনি আসলে সাহস দেখিয়েছেন। আর নিজের চিন্তাকে বিকশিত করেছেন।

র‌্যাঁবো কাব্যিক রূপকে কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। কবি তার আনন্দদায়ক কবিতা  “ভোকালস”-এ পাঁচটি স্বরবর্ণের জন্য নির্দিষ্ট রং নির্ধারণ করেছেন, এ-অক্ষরের জন্য কালো, ই-অক্ষরের জন্য সাদা, আই-অক্ষরের জন্য লাল, ইউ-অক্ষরের জন্য সবুজ এবং ও-অক্ষরের জন্য নীল। এভাবে স্বরবর্ণগুলির একটি স্বতন্ত্র চরিত্র তৈরি করেছেন যা মনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।

যখন কবিতাটি শোনা হয় তখনে যে শব্দটি পাঠক শোনেন, সেটি কাব্যিক পদের প্রতিটি স্বরবর্ণের রঙের সাথে একত্রে শুনতে পান। র‌্যাঁবোকে তার প্রেমিক ফরাসি কবি পল ভারলেন লেফাচেক্স পিস্তল দিয়ে গুলি করেছিলেন। এই পিস্তলটি ঘটনার বছর দশেক পরে নিলামে ৪৬,০০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। ১৮৮৩ সালের একটি চিঠিতে র্যাঁবো তার পরিবারকে বলেছিলেন যে তিনি “জীবনের স্বাদ এমনকি ইউরোপের ভাষাও হারাতে শুরু করেছেন।”

এটা জানা যায় যে র‌্যাঁবো এডেনে থাকাকালীন সাবলীলভাবে আরবি বলার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন, কুরআনের পাঠ নিয়েছিলেন, একটি ক্যামেরা কিনেছিলেন এবং ইথিওপিয়ান শহর হারার সম্পর্কে একটি বই লিখতে চেয়েছিলেন। ১৮৮০-১৮৯১ সাল এডেনে এই এগারো বছরের অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে বইটি শুরুর ইচ্ছে ছিল তার। এডেনে পৌঁছানোর আগে, র‌্যাঁবো জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে, মিশর ও সাইপ্রাস ভ্রমণ করেছিলেন।

যে সময়টাতে তিনি এডেনে থাকতেন তখন তিনি ইথিওপিয়ায় যান। সেখানে তিনি ব্যাপ্টিস্ট সাহল মরিয়ামের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছিলেন। যিনি শেষ পর্যন্ত ইথিওপিয়ার রাজা দ্বিতীয় মেনেলিক হয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে আক্রমণ উদ্যত ইতালির সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটে এই রাজার কাছে।

এডেনে র‌্যাঁবোর সাথে একজন ইথিওপিয়ান মহিলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার সাথে দুবছর ধরে একসাথে বসবাস করেছেন। তখনকার দিনে র‌্যাঁবো ঈর্ষণীয় স্বাধীনতা ভোগ করেছিলেন বলে চিঠিতে উল্লেখ আছে।

এডেন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রধান মোহাম্মদ আল-সাকাফের মতে, “কেন্দ্রীয় সরকার এডেনের স্থাপত্য সম্পদ ও ইতিহাস ধ্বংস করছে কারণ এটি দক্ষিণ ইয়েমেন প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ছিল। তারা শহরের প্রাণকে হত্যা করছে।” র‌্যাঁবোর বাড়ি ও এডেনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির দুর্ভাগ্যজনক অবহেলার বিষয় তুলে ধরে তিনি আল জাজিরার কাছে এ মন্তব্য করেছিলেন।

দুর্ভাগ্যবশত, র‌্যাঁবোর বাড়িটি আর কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না। ২০১৪ সাল থেকে দোতলা বাড়িটি একজন ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন। এটা ভোক্তাদের কাছে আসবাবপত্র বিক্রি করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। র‌্যাঁবোর বাড়ির গুরুত্ব হ্রাস করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে হয়। তারা এই ধারণাটি হ্রাস করতে চায় যে উত্তর ইয়েমেন থেকে দক্ষিণ ইয়েমেনের একটি অনন্য ইতিহাস রয়েছে। মূলত উত্তর থেকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দুর্বল করাই উদ্দেশ্য। র‌্যাঁবো দক্ষিণ ইয়েমেনের ইতিহাসের উপাদান।

এডেন তার জীবনদ্বারা চিত্রিত। র‌্যাঁবো এর সমসাময়িক ইতিহাসের সাথে যুক্ত। এখন সময় এসেছে এর গুরুত্ব বোঝার। র‌্যাঁবোর বাড়িটি এমনভাবে সংরক্ষণ করা উচিত যা দক্ষিণের ইতিহাসে তার ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে: “এডেন আমার পরিচয় ও আমার ইতিহাস, আর যদি আমি এটি সংরক্ষণ করতে না পারি তবে আমি অতীত হারাবো, হারাবো ভবিষ্যৎ।”

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //