‘আম কাঁঠালের ছুটি’ বাংলা ভাষায় নির্মিত শিশু-কিশোরদের চলচ্চিত্র। এটি প্রযোজনা ও পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য, সংলাপ রচনা, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা এবং সাউন্ড ডিজাইন করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। চলচ্চিত্রটি শরীফ উদ্দিনের মইন্না ভাই বল্লা রাশি ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। ৯৭ মিনিটের চলচ্চিত্র, আম কাঁঠালের ছুটি: রেটিং ৭/১০, অভিনেতা থেকে শুরু করে সকলেরই অক্লান্ত ফল এই কিশোর অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্রটি ১৮ আগস্ট মুক্তি পেয়েই দর্শকদের মনে খুশির আনন্দ বইয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি চলচ্চিত্রটির বিষয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা মোহাম্মদ নূরুজ্জামানের সঙ্গে সাম্প্রতিক দেশকালের সাহিত্য সম্পাদক এহসান হায়দার...
জোলাভাতি, গুলতি, রস কষ সিঙাড়া বুলবুলি, লাটিম–নাটাই, নারকেলপাতার চশমা- ফেলে আসা শৈশবকে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ চলচ্চিত্রে দারুণভাবে প্রাণ দিয়েছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান- এই কথাগুলো প্রিমিয়ার শো দেখা অনেক দর্শকই বলেছেন, বিস্তারিত জানতে চাই আপনার নিকট...
জীবন থেকে উঠে আসা সহজ গল্পকে সহজভাবেই বলতে চেষ্টা করেছি। কোনোরকম কম্প্রোমাইজ করিনি, কোনোরকম কৃত্রিমতার আশ্রয় নিইনি। এ কারণেই হয়তো দর্শক সহজে সিনেমাটা কানেক্ট করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, এ ধরনের কাজে নিজের ইচ্ছের সঙ্গে সকল সময়ে সব কিছু মিলবে না, তবুও এই কাজে অগ্রসর হয়েছেন, কাজ করছেন---কেমন লাগে ভালো একটা কাজের পর?
কেবল বাংলাদেশ না, সারা দুনিয়ার প্রেক্ষাপটেও চলচ্চিত্র নির্মাণ বরাবরই জটিল। এটাই একমাত্র শিল্প মাধ্যম যাতে টাকার লগ্নি নিয়ে শিল্পীকে আয়ুক্ষয় করতে হয়। এজন্যই লগ্নিকারকের অনেক আবদারও তাকে সহ্য করতে হয়। তাই শুরুতেই আমি ঠিক করেছি টাকার জন্য কারও দ্বারস্থ হবো না, নিজের সামর্থ্যরে মধ্যেই যতটুকু সম্ভব নিজের মতো করে সিনেমাটা বানাব। ভালো হোক খারাপ হোক ছবিটা আমার নিজের ইচ্ছেমতো হয়েছে, তাতেই আমি খুশি। এই স্বাধীনতাটা খুব জরুরি বলে মনে করি।
শিশুর মানসিক বিকাশে চলচ্চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুতোষ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মাধ্যম অনেক পেছনে। এর কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?
শুধু বাংলাদেশ না সারা দুনিয়াতেই চলচ্চিত্রের তালিকাটা খুব লম্বা নয়। আমি আমার মেয়েকে দেখানোর মতোই যথেষ্ট সংখ্যক চলচ্চিত্র পাচ্ছিলাম না, এমন একটা তাড়না থেকেই ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ বানানো শুরু করেছিলাম। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কম মনে করায় অনেকেই শিশুতোষ চলচ্চিত্রে লগ্নি করতে চান না। আবার একটা যথাযথ শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি করাও যথেষ্ট সময় এবং শ্রমসাপেক্ষ ব্যাপার। সব মিলিয়েই শিশুদের উপযোগী চলচ্চিত্র তৈরি করতে কেউ আগ্রহী হয় না। এমনকি হলিউডেও দেখবেন শিশুদের জন্য কেবল অ্যানিমেশন মুভিকেই ভাবা হচ্ছে আজকাল। সুপার হিরো মুভিগুলো কিন্তু সেই অর্থে শিশুতোষ না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্মিত আপনার ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আনছে। অন্য ভাষায়ও সমাদৃত হচ্ছে- কী এর কারণ বলে মনে করেন আপনি?
চলচ্চিত্র একটি সর্বজনীন ভাষা। ঠিকঠাকভাবে সিনেমাটা বানানো সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক দর্শক সেটা গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস ছিল। বাস্তবে দেখলাম বিদেশি দর্শকরা সিনেমাটা কানেক্ট করতে পারছেন। এটা অবশ্যই একটা আনন্দদায়ক ঘটনা। তবে বিদেশের মাটিতে নিজের চেয়ে বাংলাদেশের নাম শুনতেই সবচেয়ে ভালো লাগে।
ভবিষ্যতে আপনার পরিকল্পনা কী, শিশুদের জন্য আরও কাজ করবেন কি?
পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ‘মাস্তুল’ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। আরও শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি করব কি না তা বলতে পারছি না, তবে শিশুদের ব্যাপারে আমি সব সময়ই আগ্রহী।
দেশে চলচ্চিত্র কর্মীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে, কাজের পরিমাণও বাড়ছে, সরকার অনুদান দিচ্ছে। কিন্তু চলচ্চিত্রে যে চমৎকারিত্ব তা এখনো আমরা দেখতে পাইনি; এর কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, চলচ্চিত্র তৈরি করার আগে নির্মাতার নিজস্ব চলচ্চিত্র দর্শন ঠিক করে নেওয়াটা খুব জরুরি। কী করছি কেন করছি সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার না থাকলে পথভ্রষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় এই জায়গাটাতেই আমরা পিছিয়ে আছি, বাজেট কিংবা দক্ষতার জায়গায় নয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh