‘মাই বয় গো অ্যান্ড সোক’

লেখক গবেষক আর পণ্ডিতদের জীবনযাপন হয় একেবারে আলাদা, সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরের সে জীবন। তারা কখন খান, কখন ঘুমান, কখন জীবনের অন্য কার্যাদি সম্পন্ন করেন তা কেবল তারা নিজেরাই জানেন; আবার জানেনও না। এমনও লেখক আছেন যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন পছন্দের কাজে ডুবে- এমনই হয় লেখক পণ্ডিতদের জীবনী। সমকালে সবচেয়ে আলোচিত আহম্মদ ছফা ছিলেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ভক্ত। ছফার প্রিয় শিক্ষক রাজ্জাক স্যার কেমন বইপ্রেমী ছিলেন তা নিয়ে বিচিত্র লিখেছেন- শোয়াইব আহম্মেদ।

গবেষণার কাজে আহমদ ছফা জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্যারের সহযোগিতা বা পরামর্শ নিতে তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। রাজ্জাক স্যারের বাসায় বুকসেলফে মূল্যবান সব বইয়ের কালেকশন ছিল। ছফা একদিন সেই বুকসেলফে বই ঘাটছিলেন।

রাজ্জাক স্যার বললেন-‘আপনে এখন কী পড়াশোনা করবার লাগছেন?’

ছফা বললেন- কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। রাজ্জাক স্যার তখন যেই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শটি দিলেন সেটি হলো-‘মাই বয় গো অ্যান্ড সোক।’ এর ব্যাখ্যাও রাজ্জাক স্যার দিলেন-‘মূলত পছন্দের টপিকের কাছাকাছি বই পেলেই পড়ে ফেলতে হবে। তার পর পড়তে পড়তে একটা সময় বুঝতে পারবেন আপনার আর কী কী পড়া উচিত।’

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পিএইচডি করার জন্য রাজ্জাক স্যার প্রফেসর হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে ছিলেন। গবেষণার সময় হ্যারল্ড লাস্কি রাজ্জাক স্যারকে এই একই উপদেশ দিয়েছিলেন। রাজ্জাক স্যার গবেষণার ফাঁকে সময় পেলেই লন্ডনের রাস্তায় বই খুঁজতে বের হতেন। মূল্যবান বই খুঁজে পেলে সেগুলো কিনে ফেলতেন। হ্যারল্ড লাস্কি মারা গেলে রাজ্জাক স্যার আর গবেষণা সম্পন্ন করেননি। তার ধারণা ছিল এই গবেষণা পেপার হ্যারল্ড লাস্কি ছাড়া অন্য কেউ মূল্যায়ন করতে পারবেন না। পরে ডক্টরেট ডিগ্রি না নিয়েই তিনি লন্ডন ঘুরে ঘুরে কেনা সমস্ত বই জাহাজে তুলে বাংলাদেশে চলে আসেন। বই-পুস্তক রাজ্জাক স্যারকে কীভাবে ঘিরে থাকত তার খুব সুন্দর বর্ণনা আহমদ ছফা দিয়েছেন। সর্বপ্রথম যেদিন আহমদ ছফা রাজ্জাক স্যারের বাসায় যান সেদিনের কথা আহমদ ছফা লিখেছেন-‘বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কাউকে না পেয়ে আমি ভয়ে ভয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ঘরটির পরিসর বিশেষ বড় নয়। চারদিকে বই-পুস্তকে ঠাসা। ঘরটিতে একটিমাত্র খাট। না, খাট বলা ঠিক হবে না, চৌকি। সামনে একটি ছোট টেবিল। চৌকিটির আবার একটি পায়া নেই। পায়ার জায়গায় বইয়ের উপর বই রেখে ভরাট করা হয়েছে। চমৎকার ব্যবস্থা। পুরনো বইপত্রের আলাদা একটা গন্ধ আছে। আমি সেই বইপত্রের জঞ্জালে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

এই ঘরে যে কোনো মানুষ আছে প্রথমে খেয়ালই করিনি। হঠাৎ দেখলাম চৌকির উপর একটা মানুষ ঘুমিয়ে আছে। একটা পাতলা কাঁথা সে মানুষটার নাক অবধি টেনে দেওয়া। চোখ দুটি বোজা, মাথার চুল কাঁচা; অনুমানে বুঝে নিলাম ইনিই প্রফেসর রাজ্জাক।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //