ভাস্কর্য ও স্থাপনায় মুক্তিযুদ্ধ

একটি জাতির জীবনধারা, তার সংগ্রাম, বীরত্ব আর আত্মত্যাগের স্মারক প্রতিফলিত হয় তার ভাস্কর্য ও স্থাপত্যে। বাঙালির সুদীর্ঘ স্বাধিকার সংগ্রাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনুকূল পরিস্থিতিতে নানাক্ষেত্রের ন্যায় শিল্পীদের হাত ধরে চারুশিল্প নতুন পথের দিশায় ব্যাপৃত হয়।

পাকিস্তানি আমলে রাষ্ট্রীয় সীমাবদ্ধতায় ভাস্কর্য নির্মাণের প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থা সাময়িকভাবে কেটে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির অসম সাহসিকতায় পরাধীনতার শৃঙ্খল ঘুচে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বহিরাঙ্গন ভাস্কর্য নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানে না কেন একে একে গড়ে উঠেছে এগুলো। আজ আমরা এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনার পরিচিতি তুলে ধরব।

জাগ্রত চৌরঙ্গী

১৯৭৩ সালে ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম ভাস্কর্য-জাগ্রত চৌরঙ্গী প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিল্পে পাঠ নেওয়া শিল্পী ও ভাস্কর অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এটির নির্মাতা। এক মুক্তিযোদ্ধার ঊর্ধ্বমুখী বাস্তবানুগ অবয়বের সঙ্গে তার শরীর সংস্থানে ইউরোপীয় ভাস্কর জিয়াকোমিতির সিলিন্ডার ধারার ফর্ম প্রয়োগ এটিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চের আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। আর এই প্রতিরোধযুদ্ধে শহীদ হুরমত উল্যাসহ শহীদদের অবদান এবং আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য-জাগ্রত চৌরঙ্গী।

বর্তমানে চৌরঙ্গীর ওই মোড়ে সড়ক যোগাগোগের সুবিধার্থে ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য উপভোগ ব্যাহত করেছে।

অপরাজেয় বাংলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা তিন নারী-পুরুষের ভাস্কর্য ১অপরাজেয় বাংলা’ স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণকে তুলে ধরেছে। দুই যুবক ও এক নারী অবয়বের এই ভাস্কর্য। ১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে এর উদ্বোধন করা হয়। স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত এই ভাস্কর্যটি গড়ে তুলেছেন প্রয়াত গুণী শিল্পী ও ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ।

স্বোপার্জিত স্বাধীনতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পশ্চিম পাশে ডাসের পেছনে অবস্থিত এ ভাস্কর্যে প্রতিফলিত হয়েছে পাকিস্তানি হানাদারের অত্যাচারের খণ্ড-চিত্র। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটির কাজ শেষে ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। এটি গড়েছেন ভাস্কর শামীম সিকদার।

সংশপ্তক

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত হয় স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে-যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান। এর ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।

শাবাশ বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে খানিক অগ্রসর হলে সিনেট ভবনের দক্ষিণে ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ নামের ভাস্কর্য। ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর নকশায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে এর ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।

দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি হয়ে ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে ৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে, অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ের ভঙ্গিমায়। এ দুজন মুক্তিযোদ্ধার পেছনে ৩৬ ফুট উঁচু দেয়াল। এর উপরের দিকে রয়েছে সূর্যের মতো শূন্য বৃত্ত। ভাস্কর্যটির নিচের দিকে ডান ও বাম উভয়পাশে ৬ ফুট বাই ৫ ফুট উঁচু দুটি ভিন্ন চিত্র। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে দুজন যুবক-যুবতী। শ্মশ্রুমণ্ডিত যুবকের কাঁধে রাইফেল, কোমরে গামছা বাঁধা, যেন বাউল। আর যুবতীর হাতে একতারা। বাম দিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু, দুজন যুবতী একজনের হাতে পতাকা। পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেঞ্জি পরা এক কিশোর।

বিজয় ’৭১

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিসংগ্রামে বাংলার সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে-ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে “বিজয় ’৭১”। একজন কৃষক মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন আকাশের দিকে। তার ডান পাশেই শাশ্বত বাংলার সর্বস্বত্যাগী ও সংগ্রামী নারী দৃঢ়চিত্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। যার সঙ্গে আছে রাইফেল। অন্যদিকে একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা গ্রেনেড ছোড়ার ভঙ্গিমায় বাম হাতে রাইফেল নিয়ে তেজোদীপ্তচিত্তে দাঁড়িয়ে। ভাস্কর শ্যামল চৌধুরীর নকশা ও তত্ত্বাবধানে “বিজয় ’৭১” ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ২০০০ সালের জুন মাসে শেষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের সড়কদ্বীপে স্থাপিত রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত বাঙালি-অবাঙালির স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত একটি অসাধারণ স্মারক স্থাপনা। বাঙালির বীরোচিত সংগ্রাম, যুদ্ধ ও আত্মদানের অবিচল আকাঙ্ক্ষার দৃঢ় প্রতীক এই স্থাপনার নান্দনিক নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেছেন।

সর্বজনীন এই স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। ১৫০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট শীর্ষ বাহুটির দুইপাশে ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসা তিনটি করে ছয়টি অর্থাৎ মোট সাতটি বাহু সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক। ১৯৭৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯৮২ সালে শেষ হয়।

বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে এটি নির্মিত হয়েছে।

১৯৭৪ সালে মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে বঙ্গবন্ধু এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। এর স্থপতি তানভীর কবির। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাধীনতার স্মৃতি ধরে রাখতে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা মুজিবনগর কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ভিতরে শপথগ্রহণ স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সিরামিকের ইট দিয়ে একটি আয়তকার লাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মাঝখানে স্মৃতিসৌধটি ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ২৩টি দেয়াল (আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১)-এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে।

স্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদিতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের করোটির প্রতীক।

স্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদিতে অসংখ্য পাথর ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের প্রতীক। পাথরগুলোর মাঝখানে ১৯টি রেখায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯টি জেলাকে নির্দেশ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের বেদিতে ওঠার জন্য ১১টি সিঁড়ি মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সেক্টরের প্রতীক।

এসব স্থাপনা ও ভাস্কর্য ছাড়াও গত পঞ্চাশ বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, সিলেট, যশোর, খুলনাসহ দেশের নানা জেলাশহরে বরেণ্য ব্যক্তির অবয়ব ও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাস্কর সুলতানুল ইসলামের গড়া ভাস্কর্য ‘দুরন্ত’ শৈশবের স্মৃতিকে তুলে ধরে।

মুক্তিযুদ্ধকে ভেতর থেকে দেখতে ও জানতে হলে আমাদের যেতে হবে ঢাকার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। জামালপুরে অতিসম্প্রতি আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের উদ্যোগে সম্প্রতি খুলনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গণহত্যা জাদুঘর। ওখানে পাকিস্তানিদের বর্বর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের নানা স্মারক, চিত্র ও ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে। ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। বহিরাঙ্গন ও স্টুডিও ভাস্কর্যে এ সময় সৃষ্টিশীলতা দেখিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন ভাস্কর আনোয়ার জাহান (প্রয়াত), মজিবুর রহমান, জুলফিকার লেবু, রাসা, এনামুল হক, মৃণাল হক (প্রয়াত), তৌফিকুর রহমান, বদরুল আলম নান্নু (প্রয়াত), মাহাবুব জামাল, লালা রুখ সেলিম, রেজাউজ্জামান, সেলিম আহমেদ (প্রয়াত), হাবিবুর রহমান, মোস্তফা শরিফ আনোয়ার, মিতু হক, ময়নুল ইসলাম পল, কাজী সাইফুদ্দিন আব্বাস, মাহবুবুর রহমান, শহিদুজ্জামান শিল্পী, কীরিটিরঞ্জন বিশ্বাস, গোপাল চন্দ্র পাল, মুকুল বাড়ৈ, মুক্তি ভৌমিক, রবিউল ইসলাম, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, নাসিমুল খবির ডিউক, হাবিবা আকতার পাপিয়া, তেজস হালদার, শ্যামল সরকার, সিগমা হক অংকন, রেহানা ইয়াসমিন, অভিজিৎ কান্তি দাস প্রমুখ শিল্পী ও ভাস্কর। বাংলাদেশের নানা এলাকায় তাদের সৃজিত ভাস্কর্য ছড়িয়ে আছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //