বিদিশার পিতা কবি আবু বকর সিদ্দিক আর নেই

বিদিশা এরশাদের বাবা কবি আবু বকর সিদ্দিক (৯১) আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে খুলনার সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এর আগে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খুলনা মহানগরীর ৫ নম্বর মুন্সিপাড়া ছোট বোনের বাড়িতে কবি দীর্ঘ ১ যুগ ধরে বসবাস করে আসছিলেন।

কবির ছোট বোনের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে মামা আবু বকর সিদ্দিক আমাদের বাসায় থাকতেন। আজ বৃহস্পতিবার বাদ যোহর খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে কবির জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।  

মৃত্যুকালে কবি পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গিয়েছেন।  বরেণ্য শিক্ষক ও কবি আবু বকর সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

আবু বকর সিদ্দিক একাধারে ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও সমালোচক। তিনি ১৯৩৪ সালে ১৯ আগস্ট (রবিবার) বাগেরহাট জেলার গোটাপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস একই জেলার বৈটপুর গ্রামে। পিতা মতিয়র রহমান পাটোয়ারী ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী।

বাবার চাকরি সূত্রে ১৯৩৫ সাল থেকে তিনি হুগলি শহরে এবং ১৯৪৩ সাল থেকে বর্ধমানে বসবাস করেন। বাল্যকাল থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক। ১৯৪৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন তাঁর প্রথম কবিতা আবদুস সাত্তার সম্পাদিত বর্ধমানের কথা পত্রিকায় ছাপা হয়।

তিনি বাগেরহাট মাধ্যমিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫৪ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

পেশাগত জীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি পর্যায়ক্রমে চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, বাগেরহাট পিসি কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা করেন।

তিনি কবিতা লিখতে বেশি পছন্দ করতেন। তাঁর প্রকাশিত ধবল দুধের স্বরগ্রাম (১৯৬৯), বিনিদ্র কালের ভেলা (১৯৭৬), হে লোকসভ্যতা (১৯৮৪), মানুষ তোমার বিক্ষত দিনসহ (১৯৮৬) ১৮টি কাব্যগ্রন্থ আছে। আছে হট্টমালা (২০০১) নামে একটি ছড়াগ্রন্থও।

তাঁর লেখা গল্পগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি। তিনি জলরাক্ষস (১৯৮৫), খরাদাহ, একাত্তরের হৃদয়ভস্ম, বারুদপোড়া প্রহর (১৯৯৬) নামে উপন্যাসও লিখেছেন।

সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি আবুবকর সিদ্দিক ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার, বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতি পুরস্কার (কলকাতা), খুলনা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, বাগেরহাট ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ঋষিজ পদকসহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //