প্রাচীন আরবে কবিতা কতটা জনপ্রিয় ছিল

প্রাক-ইসলামি আরবের সময়কাল এবং পরিস্থিতি বোঝাতে ‘জাহিলিয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। শব্দটি দ্বারা ‘অজ্ঞতার যুগ’ বোঝায়, যেটা কিনা একটি নেতিবাচক অর্থ রাখে। এই যুগের আরবরা নিজেদের ধ্বংসাত্মক ও পাপপূর্ণ উপায়ে পরিচালনা করেছিল বলে মনে করা হয়। তারা প্রায়শই জুয়া খেলা, মদ পান, সুদ ও ব্যভিচার করত। বহুদেবত্ববাদকেও প্রায়ই সময়কালের বৈশিষ্ট্য হিসেবে নেতিবাচকভাবে উল্লেখ করা হয়। ইসলামি ঐতিহ্য জাহিলিয়ার জন্য কার্যত একমাত্র ইতিবাচক জিনিসটি হলো সেই সময়ের কবিতা। এ সময়ে আমাদের জ্ঞান বেশিরভাগই বেঁচে থাকা ঐতিহ্য, কিংবদন্তি ও কবিতা থেকে উদ্ভূত, কারণ সময়কালের লিখিত উৎস সীমিত। 

আরবদের মধ্যে কবিতা একটি ব্যাপকভাবে চর্চা করা শিল্প ও একটি অত্যন্ত সম্মানিত দক্ষতা হিসেবে দেখা হতো। জাহিলি কবিতার মূল্য এতটাই ছিল যে, ইসলামের আবির্ভাবের পর বহু শতাব্দী ধরে মুসলমানরা তা সংরক্ষণ ও শিক্ষা দিয়ে আসছে। কবিতার মাধ্যমে আরবরা কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, ব্যক্তি ও গোত্রের প্রশংসা করেছিল, যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেছিল আর তাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্রিয়াকলাপকে উন্নত করেছিল। বিখ্যাত জাহিলি কবিতার বিষয়গুলো প্রিয়জনের মৃত্যুতে বিলাপ থেকে শুরু করে কবির উটের বিস্তৃত বর্ণনা পর্যন্ত। কবিতার ক্ষেত্রে কোনো কঠোর নিয়ম ছিল না। তাই প্রতিটি জাহিলি কবির নিজস্ব শৈলী ছিল আর তারা তাদের পছন্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন ছিল।

সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও কবিতার ভূমিকা ছিল। উপজাতিরা সংঘর্ষে লিপ্ত হলে কবিরা তাদের উপজাতির সম্মান রক্ষা করতেন সাবধানে নির্মিত চরণ পাঠ করে ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে নির্দেশ করে। এই কাব্যিক যুদ্ধকে রক্তপাত ছাড়াই অভিযোগ প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

শারীরিক যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ও উপজাতীয় নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হওয়া নিষিদ্ধ হলেও নারীদেরকে কবি হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, শিল্প তাদের কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত লিঙ্গ ভূমিকার প্রেক্ষাপটে একটি কণ্ঠস্বর দেয়।

আরবদের দ্বারা আরোপিত গুরুত্বের কারণে অনেক জাহিলি কবিতা টিকে আছে। শুরুতে শুধু কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে এবং পরে লেখার মাধ্যমে তারা তাদের উত্তরাধিকারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে মুসলমানরা মনে করেন যে, কোরআন নাজিলের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী সমস্ত আরব কাব্য সাহিত্যের গুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ইসলামের আবির্ভাব জাহিলিয়া যুগের অবসান ঘটায়। মুহাম্মদ (সা.) একটি নতুন জীবনধারা প্রবর্তন করেছিলেন যা গভীর পরিবর্তনের সঙ্গে এসেছিল। যে উত্থান ছিল পৃথিবী কাঁপানো উন্নয়ন। এটি আরব সমাজের সম্পূর্ণ পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। বিভক্ত মরুভূমি উপজাতি যারা একে অপরের সঙ্গে চিরকাল সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল তারা একত্রিত হয়েছিল এবং কয়েক দশকের ব্যবধানে পরিচিত বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ জয় করেছিল। আরবদের প্রাধান্যের উত্থান জাহেলিয়াতের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে যেমন ইসলামের কার্যকারিতার কথা বলে, তেমনি বলা হয় আরবের কবিতা ও কবি সমাজের কথা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //