‘মানহীন বইয়ে ভরে যাচ্ছে শিশুসাহিত্য’

শিশুসাহিত্য নাকি মানহীন বইয়ে ভরে যাচ্ছে! এ কথা বলেছেন ব্রিটিশ লেখক অ্যান্তনি হরউইজ। তিনি একজন বেস্ট সেলার লেখক। অ্যান্তনি হরউইজ ২০০০ সালে একটি কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ লিখেছিলেন। সেই সিরিজটি বেস্ট সেলার হয়েছিল।

হে ফেস্টিভ্যালে এই লেখক অভিযোগ করেছেন, “শিশুসাহিত্য ‘নিম্নমুখী’ হয়ে যাচ্ছে, কারণ প্রকাশকরা সঠিক গল্প বাছাই করতে পারছেন না।” শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি তিনি। আরও বলেছেন, ‘জে কে রাউলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজ এখন মুক্তি পেলে সাফল্য পাবে না।’ এই লেখক মনে করেন, তরুণদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। তাই বই পড়ার প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে গেছে। হে ফেস্টিভ্যালে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জে কে রাউলিং ছয়শ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছিলেন। যে বইটি তরুণদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। তারপর তো হ্যারি পটার বিশ্বব্যাপী হিট হলো; কিন্তু এখন যদি পনেরো বছর বয়সীদের জন্য দেড় লাখ শব্দের কোনো বই লেখা হয়, তা সাড়া ফেলবে না! আর এই বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করে, কারণ শিশুদের বইয়ের জগৎ বদলে গেছে।’

তার ভাষ্য, প্রকাশকরা এখন চাহিদা পূরণে নিছকই মজার, কৌতুক, অবাস্তব গল্পের দিকে ঝুঁকছে। যেখানে শিক্ষণীয় কিছুই থাকছে না। শিশুর মনোজগৎ বিকাশের মতো গল্প থাকছে না। আমার কাছে মনে হয়, আধুনিক শিশুতোষ বইগুলো এক ঘরানার হয়ে গেছে। আপনি যদি কোনো বইয়ের দোকানে ঢুকে চারপাশের প্রচ্ছদের দিকে তাকান, তাহলে একই ধরনের প্রচ্ছদ দেখতে পাবেন। একই চটকদার রঙ দেখতে পাবেন। এই রঙ দেখে শিশুরা আকর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু বইয়ের ভিতরে কী গল্প আছে সেটা নিয়ে কেউ ভাবছে না।

দ্য টেলিগ্রাফকে এই লেখক বলেন, ‘আমি দুর্দান্ত লেখার ছন্দে ছিলাম। আমার বইগুলো বড় ছিল এবং কখনো কখনো এগুলো আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি কিন্তু ক্ল্যাসিক গল্পের কথা বলেছি, যার যথাযথ ভিত্তি রয়েছে। আমি বলছি না এই বইগুলোর আর অস্তিত্ব নেই, কিন্তু কম বাণিজ্যিক সাফল্যের কারণে এগুলো এখন কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। অবশ্য আমি যখন লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন পরিস্থিতি এমন ছিল না।’

অ্যান্তনি হরউইজ নিজেকে ডেভিড ওয়ালিয়ামসের বড় ভক্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, যার বই শিশুদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। তিনি বলেন, “লেখকের স্টাইলকে ‘বাজারমুখী করতে’ প্রকাশকরা তাদের মতো করে কৌশল নির্ধারণ করে দেন।

ডেভিড ওয়ালিয়ামসের বই ভালো চলে। এজন্য অনেকে আবার তাকে অনুকরণ করেন। আমি মনে করি, এখানেই আসল সমস্যা। অবশ্যই ডেভিড ওয়ালিয়ামস অসাধারণ লেখেন। শিশুরাও তাকে অনেক পছন্দ করেন। কিন্তু যখনই প্রকাশকরা ডেভিড ওয়ালিয়ামসের সাফল্য দেখেন, তারা অন্য লেখকদেরও তাকে অনুকরণ করতে উৎসাহ দেন। তখনই শিশুসাহিত্যের বাজার অনুকরণে ভরে যায়।”

তিনি মনে করেন, ‘বেশি রঙচঙে বই, একই ঘরানার লেখা ও জনপ্রিয় সাহিত্যিককে অনুকরণ করতে গিয়ে প্রকাশকরা শিশুসাহিত্যকে নিম্নমুখী করে ফেলেছেন। এ কারণেই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি প্রকাশকদের এই নীতির বিরোধী।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //