ইয়েমেনি শিল্পী দুনিয়া আল শিতাইরির উত্থান সৌদিতে

ইয়েমেনের ইয়াফা শহরে ১৯৮৩ সালে দুনিয়া আল শিতাইরির জন্ম। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে শিল্পচর্চা করছেন। পাশাপাশি পড়াশুনা করেছেন তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে। শিল্পের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থাকায় জেদ্দাভিত্তিক চারুকলা প্রতিষ্ঠান আর্টস অ্যান্ড স্কিল ইনস্টিটিউট (এএসআই) থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে একক ও যৌথভাবে দশটি চিত্রকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। দুনিয়ার কাজের মধ্যে সাধারণত বিমূর্ত ধারা লক্ষ্য করা যায়। টুকরো তার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবহারে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলতে প্রভাবিত গণিত, জীব বিজ্ঞান ও অর্জিত বিদ্যা প্রোগ্রামিং ব্যবহার করেন তিনি।

দুনিয়া আল শিতাইরির শিল্পকর্ম।


সালামি অনলাইনকে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দেন দুনিয়া আল শিতাইরি। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন মহিউদ্দীন মোহাম্মদ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের সংকটে শিল্পীরা কী ধরনের অবদান রাখতে পারে?

ইয়েমেনের সংকট খুব জটিল। এখানে সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক। এই কঠিন সময়ে শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে — সৃজনশীল কাজ অব্যাহত রাখা। সর্বোপরি শিল্পের মাধ্যমে সমাজকে প্রতিফলিত করতে হবে। সাথে পরিবর্তনের ইচ্ছেটাও দেখাতে হবে।

শিল্পী হিসেবে ইয়েমেন ও সৌদিকে কীভাবে তুলনা করবেন?

সৌদি আরব আর ইয়েমেনের মধ্যে সাধারণ সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে। উভয়ের আছে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। যেহেতু, আমি এর একটির সাথে সম্পৃক্ত ও অন্যটিতে থাকি, তাই এটা আমার মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। আমি নিজে বিভিন্ন সংস্কৃতি শেখার চেষ্টা করি ও সেটা নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে উৎসাহ বোধ করি। সত্যি বলতে, বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সৌদি আরবে বসবাস আমার বৃদ্ধি ও বিকাশের সুযোগ দিয়েছে।

ধারণা তৈরিতে আপনি কীভাবে সমীকরণ ব্যবহার করেন?

প্রোগ্রামিংয়ে পড়া ও গাণিতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমার মধ্যে বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনা ও গবেষণা উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। আর বিজ্ঞান হচ্ছে অস্তিত্ব ও সম্প্রীতির ভারসাম্য ও সমন্বয়ের ভাষা। আমরা দেখতে পাই, অনেকগুলো সীমাহীন জ্যামিতিক কনফিগারেশন সমীকরণ থেকে উদ্ভূত। সরল বা জটিল যাই হোক না কেন, এই সমীকরণগুলো আমাদের চারপাশের অনেকগুলো ঘটনা বোঝার ও ব্যাখ্যা করার ভিত্তি।

আপনার শিল্পযাত্রা কেমন ছিল?

আমি বলতে পারি, এটি আবেগ ও অনুসন্ধানের আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ বিস্ময়কর যাত্রা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সমর্থ হয়েছি। আমার কাজ সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। কাজে বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছি। গেল বছরটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সৌদির সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও শারজাহ জাদুঘরের সাথে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বছরটি শেষ হয়েছে।

শিল্পের ব্যাপারে বর্তমানে সৌদির দৃষ্টিভঙ্গি কী?

সৌদি আরবে সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে। কারণ শিল্প ও শিল্পীদের সমর্থন দিচ্ছে দেশটি। বর্তমান নেতৃত্বের কারণেই এটা দেখতে পাবেন। সরকার যেহেতু বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রতিভাগুলোকে মূল্যায়ন করছে, ফলে ভবিষ্যতে এটা অনেক প্রভাব ফেলবে।

নিজের শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে আপনার প্রিয় মাস্টারপিস কোনটা?

প্রতিটি শিল্পকর্মই তৈরি হয়েছে মুহূর্তের অনুভূতি ও চিন্তা ধারণ করে। সম্ভবত শারজাহ জাদুঘরে ইসলামিক আর্ট ফেস্টিভ্যালে নাবার যে কাজ প্রদর্শিত হয়েছিল, সেটাই মাস্টারপিস। আজানে শব্দের যে শক্তি তার উপস্থিতি শনাক্ত করি। আর শ্রুতিমধুর শব্দের পেছনের মিথষ্ক্রিয়াকে উল্লেখ করি, যা আমাদের সংবেদনশীলতাকে প্ররোচিত করে। 

শিল্প আপনাকে কীভাবে সন্তুষ্ট করে?

আমাদের চারপাশে যা আছে, তা অনুসন্ধানের চেষ্টাই হচ্ছে শিল্প। চিন্তা ও অনুভূতির মধ্যে সংযোগকারী রেখা এটি। যতবারই কোনো ধারণা মাথায় আসে, দেখা যায় পৃথিবীতে শিল্পের একটি জায়গা রয়েছে।

নিজের শিল্পে কোন সরঞ্জাম এবং কৌশল ব্যবহার করেন?

আমি ধারণা হিসেবে বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করি ও শিল্পকর্ম নিজেই এর সরঞ্জামগুলোর সন্ধান করে। আমার শিল্পকর্মে উপাদান হিসেবে তার ও প্লাস্টিক ব্যবহার করি। হালকা আলো ও শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে নানা ধরনের শিল্পচর্চায় মগ্ন থাকি।

বিশ্বব্যাপী শিল্পীদের জন্য আপনার কোনো বার্তা আছে?

বিশ্বের সব শিল্পীর কাছে আমার বার্তা — এই কঠিন সময়ে নিজের অনন্যতা ও অন্বেষণ  চালিয়ে যেতে হবে। নিজের অনুভূতিকে শিল্পকর্মে স্থানান্তর করার চেষ্টা করতে হবে। দুর্দান্ত কাজগুলো আসলে কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

দুনিয়া আল শিতাইরির শিল্পকর্ম

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //