হঠাৎ রক্তের মতো লাল ইন্দোনেশিয়ার আকাশ!

ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের আকাশ গত সপ্তাহে রক্তের মতো লাল হয়ে যায়। ওই অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বুনো আগুনের কারণে এমন হয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।

দেশটিতে প্রতিবছর আগুনের কারণে ধোয়াটে কুয়াশা তৈরি হয়, যা পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির এক আবহাওয়াবিদ বিবিসিকে বলেছেন, ওই অস্বাভাবিক রঙিন আকাশের ঘটনাটি ঘটেছে 'রেলিগ স্ক্যাটেরিং' নামের চলমান ঘটনার কারণে।

জাম্বি প্রদেশের মেকার সারি গ্রামের বাসিন্দা ইকা উলান্দারি শনিবার দুপুরে রক্তের মতো লাল ওই আকাশের বেশ কয়েকটি ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করার পর তা ৩৪ হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়েছে।

ছবিগুলো পোস্ট করে ওলান্দারি বলেন, ‘এই ধোঁয়াশা আমার চোখ ও গলায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ওইদিন ধোঁয়াশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ছিল।’

তবে তিনি বিবিসি ইন্দোনেশিয়াকে বলেছেন, অনেক অনলাইন ব্যবহারকারী সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে, এই ছবিগুলো সত্যি কিনা। কিন্তু এটা সত্যি। এগুলো আসল ছবি ও ভিডিও, যা আমি আমার মোবাইল ফোন দিয়ে তুলেছি।’

ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের আকাশ রক্তের মতো হয়ে গিয়েছিল। ছবি: বিবিসি

যুনি শোফি ইয়াতুন নিসা নামে এক বাসিন্দা টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে একই ধরণের আকাশ দেখা যাচ্ছে। তিনি পোস্টে লিখেছেন,'এটা মঙ্গলগ্রহ নয়, এটা জাম্বি। আমরা মানুষদের জন্য পরিষ্কার বাতাস দরকার, ধোঁয়া নয়।'

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া দপ্তর বিএমকেজি বলছে, স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে জাম্বি প্রদেশে এরকম বেশ কয়েকটি এলাকা পাওয়া গেছে, যেখানে ধোঁয় জমাট বেধে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক কোহ তিয়ে ইয়োং ব্যাখ্যা করেন, 'রেলিঙ স্ক্যাটেরিং' এ ধরণের বিশেষ ঘটনায় বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরণের অণু যুক্ত হয়ে থাকে, যা কুয়াশার একটি নির্দিষ্ট সময়ে দৃশ্যমান হয়ে থাকে। ধোঁয়ার কারণে তৈরি হওয়া কুয়াশায় বেশিরভাগ অণুগুলো থাকে প্রায় এক মাইক্রোমিটার আকারের, কিন্তু আমাদের দেখা আলোর রঙ এসব অণু পাল্টায় না।

তিনি বলেন, 'সেখানে এরকম প্রায় ০.০৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়েও ছোট অণু থাকে, যা হয়তো খুব বেশি আবছায়া তৈরি করে না। কিন্তু দিনের কোনো একটা সময়ে সেটির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। তখন এর কারণে চারদিকে সাধারণ আলোর পরিবর্তে লাল আভার তৈরি হয়।'

তিনি আরো বলেন, দুপুরে ছবিগুলো তোলার কারণে আকাশ অনেক বেশি লাল দেখাচ্ছে। সূর্য যদি মাথার ওপরে থাকে এবং আপনি ওপরে তাকান, আপনি হয়তো সূর্য বরাবর তাকালেন, তখন আকাশ অনেক বেশি লাল দেখা যেতে পারে। এই ঘটনার ফলে বাতাসের তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন হয় না।

এই আবছায়ার তৈরি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে দাবানলের কারণে, যা মালয়েশিয়ার কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত এরকম আগুনের ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার শুকনো মৌসুমে, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ঘটে থাকে।

ইন্দোনেশিয়ার জাম্বি প্রদেশের আকাশ রক্তের মতো হয়ে গিয়েছিল। ছবি: বিবিসি

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বছরের প্রথম আট মাসে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৭২৪ হেক্টর জমি আগুনে পুড়েছে। এই আগুনের একটি অংশের জন্য দায়ী বড় ও ছোট আকারের কৃষকরা, যারা শুকনো মৌসুমের সুযোগে পাম অয়েল, পাল্প আর কাগজ তৈরির গাছ লাগানোর জন্য গাছপালা পুড়িয়ে দেয়।

আগুন লাগিয়ে জমি পরিষ্কারের এই পদ্ধতি ওই এলাকার কৃষকের কাছে অনেক জনপ্রিয়, কারণ এটা তাদের কাছে সহজ পদ্ধতি। পাশাপাশি তাদের নতুন ফসলে কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু কখনো কখনো এ ধরণের আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

ইন্দোনেশিয়ায় এভাবে আগুন লাগিয়ে জমি পরিষ্কার করা বেআইনি, তবে বছরের পর বছর ধরে এটা চলে আসছে। অনেকে মনে করেন, দুর্নীতি ও দুর্বল সরকারি ব্যবস্থার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //