মিয়ানমারে সামরিক জান্তার হামলায় ৩৮ বিক্ষোভকারী নিহত

রক্তে ভাসছে মিয়ানমার। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন শহরে হওয়া বিক্ষোভে বুধবার (৩ মার্চ) ৩৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিক্ষোভ শুরুর পর এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বুধবারের হতাহতের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ডাক দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন শার্নার বার্গেনার জানান, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছে। তিনি বলেন, একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ এক নিরস্ত্র স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল কর্মীকে পেটাচ্ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তার ওপর বিক্ষোভকারীকে গুলি করা হয়েছে আর সম্ভবত মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক জন অস্ত্র বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি আর তারা আমাকে যাচাই করেছে, স্পষ্ট নয় কিন্তু মনে হচ্ছে যে পুলিশ ৯ এমএম সাবমেশিনগানের মতো অস্ত্র ব্যবহার করেছে আর তার সঙ্গে তাজা গুলিও।’

মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গুনসহ বেশি কয়েকটি শহরে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েতে সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালানো শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে নিহতদের মধ্যে ১৪ ও ১৭ বছর বয়সী দুই ছেলে শিশুও রয়েছে। এছাড়া ১৯ বছরের এক নারীও নিহত হয়েছে।

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর মনিওয়াতে অন্তত ছয় বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া সেখানে অন্তত আরও ৩০ জন আহত হয়েছে।

মান্দালয়ের এক ছাত্র বিক্ষোভকারী জানান তার বাড়ির কাছেই বিক্ষুব্ধদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দশটা বা সাড়ে দশটার দিকে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এই এলাকায় আসে আর তারপরেই তারা বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালানো শুরু করে। তারা কোনও সতর্কতাও জানায়নি।’

এক দিন আগে প্রতিবেশী দেশগুলো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি না চালাতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল; কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি সরকার। বরং গতকাল বিক্ষোভকারীদের প্রতি ব্যাপক ক্ষিপ্ত দেখা যায় নিরাপত্তা বাহিনীকে। গতকাল দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়। তরুণ বিক্ষোভকারী থিনজার শুনলেই ই ম্যাসেজিং অ্যাপে জানান, এটা ভয়াবহ এবং গণহত্যা। এই দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না। সামরিক সরকারের মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি।

সাউথ ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস বা আসিয়ানভুক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভে গুলি না চালাতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি না চালাতে মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কারাবন্দিদেরও মুক্তি দাবি করেন। এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো নিন্দা জানায় এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। 

তবে সময় যত গড়িয়েছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত চারজন শিশু রয়েছে।

অন্যতম বড় শহর ইয়াঙ্গুনে বুধবার পুলিশের গুলিতে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৯ জন। মঙ্গলবার এ শহরে পুলিশের গুলিতে আরও সাত বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিলেন।

দ্য মিয়ানমার নিউজ এজেন্সি জানায়, ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ থেকে ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। একাধিক মামলা হয়েছে তাঁদের নামে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে আজ ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। এক দিনে সর্বোচ্চ ৩৮ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। এ পর্যন্ত বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন ৫০ জনের বেশি। আটক করা হয়েছে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //