মিয়ানমারে ৪৩ শিশুকে হত্যার অভিযোগ

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে চলমান গণতন্ত্রকামীদের আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ শিশু নিহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন ও অধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি পীড়াদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় নিহত গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শিশুটির বয়স ছিল মাত্র সাত বছর।

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিজনারস (এএপি) বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে ৫৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত সাত বছর বয়সী মেয়ে শিশু খিন মিও চিটের পরিবারের সদস্যরা বিবিসিকে বলেছেন, মার্চের শেষের দিকে মান্দালয়ে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। খিন মিও তার বাবার কাছে দৌড়ে যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

খিন মিওয়ের বোন মে থু সুমাইয়া (২৫) বলেন, ‘তারা দরজা খোলার জন্য লাথি মেরেছিল। দরজা খুলে যাওয়ার পর তারা আমার বাবার কাছে জানতে চায় বাড়িতে অন্য কেউ আছে কি না। বাবা ‌না বললে, তারা মিথ্যাচারের অভিযোগ করে এবং বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে।’

সুমাইয়া বলেন, ‌‘খিন দৌড় শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গুলি ছোড়ে এবং সে (খিন) গুলিবিদ্ধ হয়।’

সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, গুলিতে নিহত শিশুদের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী একজনও রয়েছে; মান্দালয়ে বাড়ির ভেতরে অথবা কাছে সে গুলিতে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ইয়াঙ্গুনের সড়কে খেলাধুলা করার সময় ১৩ বছর বয়সী এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে আহত শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য বলে সতর্ক করে দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা বলছে, এক বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু চোখে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। মিয়ানমারের এই সহিংসতা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।

সেভ দ্য চিলড্রেনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিশুদের জন্য মিয়ানমার আর নিরাপদ স্থান নয়।

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবার ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন।

লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরুর দিকে জলকামানের ব্যবহার করে। এর এক সপ্তাহ পর বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ব্যবহার করে জান্তা নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //