মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লাশ

করোনায় আক্রান্ত বাবা ও ভাইকে ফোন করেও পাচ্ছিলেন না মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের এক নারী। উদ্বিগ্ন ওই নারী শুক্রবার রাত ২টার দিকে ইয়াঙ্গুন থেকে ইস্ট ডাগনেতার বাবা ও ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। বাড়িতে ঢুকে যে চিত্রটি দেখলেন তাতে রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি।

লিভিংরুমে চেয়ারে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে ভাই। ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবা মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন তার ঘরে।

একই দিন সাচাউং শহরতলির এক বৃদ্ধা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশীরা শেষ পর্যন্ত দরজা ভাঙেন। ভেতরে ঢুকে তারা বৃদ্ধাকে পেলেন মৃত অবস্থায়। বৃদ্ধার মৃতদেহটি শক্ত হয়ে গিয়েছিল, চামড়ার রঙ বেগুনি ধূসর হয়ে গিয়েছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, বেশ আগে তার মৃত্যু হয়েছে। 

মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে করোনা পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ এই দুটি ঘটনা তার নমুনা মাত্র। অতিরিক্ত রোগীর কারণে হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার। আক্রান্ত স্বজনদের জন্য অধিকাংশ মানুষের পক্ষে অক্সিজেন সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।  অনেক আক্রান্তই বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাচ্ছে, যাদের খোঁজও নিচ্ছে না সরকার।

মেত্তা থিঙ্ঘা ফিউনারেল সার্ভিসের প্রধান মিন দিন জানান, পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যখন ধ্বস নামছে তখন এই মৃত্যুর চিত্রটি একেবারেই সাধারণ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাগরিক গ্রুপগুলো জানাচ্ছে, চলতি মাসের প্রথম থেকে ইয়াঙ্গুনে দৈনিক প্রায় ৬০০ করোনা আক্রান্ত মারা যাচ্ছে। অবশ্য সামরিক জান্তার দাবি, দৈনিক মৃত্যুর গড় ১৬০ জন। 

গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর চিকিৎসাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা জান্তার আওতায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এতে করে দেশটির কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। 

মিন দিন বলেন, ‘কোনো কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নেই। গত ৮ জুলাই থেকে আমরা ইস্ট দাগনে আমরা কোনো কোভিড-১৯ শনাক্ত পরীক্ষা করতে পারিনি। যেসব বাড়িতে করোনা রোগী রয়েছে কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন সন্দেহজনক বাড়িগুলো আমরা লকডাউন করতে পারছি না।’

গত সপ্তাহে ইয়ে ওয়ে অন্তে শ্মশানে লাশের পর লাশ দাহের অপেক্ষায় থাকার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। মৃতের পাশে দাঁড়িয়ে শোক প্রকাশের সুযোগও পাচ্ছেন না স্বজনরা। একটি দেহের দাহ শেষ হওয়ার পর চুলার ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে আরেকটি মৃতদেহ। 

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ইয়াঙ্গুনভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বো সেইন সোশ্যাল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা বো সেইন। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দাহের জন্য সিরিয়ালে রাখা আছে ৫০টি মৃতদেহ। কফিন পাওয়া না যাওয়ায় মৃতদেহগুলো কম্বল বা চাটাই দিয়ে মুড়ে রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //