চীনে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫

চীনের হেনান প্রদেশে প্রবল বৃষ্টিজনিত বন্যার পর প্রাদেশিক রাজধানী ঝেংঝু শহরে পাতাল রেলের টানেলে পানি ঢুকে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানির তোড়ে শহরের বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং বহু ট্রেনের ভেতরেও বুক সমান পানি জমে যায় এবং তাতে বহু যাত্রী আটকা পড়েন।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায় যাত্রীরা পানির ওপর কোনমতে মাথা তুলে রাখতে পারছেন। পানির তোড়ে প্ল্যাটফর্ম ভেসে গেছে। পাতাল রেলের সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে ৫০০র ওপর মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রদেশের ১২টিরও বেশি শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত ২ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, হেনান প্রদেশের রাজধানী ঝেংঝু শহরে এক বছরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তা হয়েছে মাত্র তিন দিনে।

পুরো প্রদেশ জুড়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং তার অধিকাংশই ছিলো ঝেংঝু শহরে।

পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে আতঙ্ক

সেখানে শহরটির পাতাল রেলের সুড়ঙ্গ এবং ট্রেনগুলোর ভেতরেও বিপুল পরিমাণ বন্যার পানি ঢুকে পড়ে।

ট্রেনগুলোতে শত শত যাত্রী আটকা পড়েন এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনের কামরাগুলোর ভেতরে যাত্রীদের বুক সমান পানি উঠে গেছে, এবং পানির ঢল এসে প্ল্যাটফর্ম ভাসিয়ে দিচ্ছে।

ট্রেনের ভেতর যাত্রীরা কোনমতে তাদের মাথা পানির ওপর ভাসিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও ধীরে ধীরে সেখানে বাতাসের সরবরাহ শেষ হয়ে যেতে থাকলে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়। একজন যাত্রী বলেন, তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

উদ্ধারকারীরা ট্রেনগুলোর জানলা ভেঙে এবং ছাদ কেটে শত শত যাত্রীকে বের করে আনেন।

রাস্তাগুলোয় নদীর চেহারা

মাটির ওপরে রাস্তাগুলো নদীর চেহারা নেয়। পানির প্রবল স্রোতে বহু গাড়ি ভেসে যেতে থাকে। হেনান প্রদেশে ১২টিরও বেশি শহরে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকগুলো বাঁধ ভেঙে গেছে, কোথাও সেনাবাহিনী নামিয়ে উপচে পড়া নদীর পানি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে।

বেশ কিছু জায়গায় ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পুরো প্রদেশ জুড়ে অসংখ্য বাড়িঘর, স্কুল এবং হাসপাতাল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরে বন্যা প্লাবিত একটি নার্সারি স্কুল থেকে বাচ্চাদের উদ্ধার করা হয়। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে শিশুদের প্লাস্টিকের গামলা ভাসিয়ে উদ্ধার করার এই দৃশ্য দেখানো হয়।

আবহাওয়ার খবরে আগামী তিন দিন ধরে আরো বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকেরা বলেছেন, তারা জীবনে কখনো এমন বৃষ্টি দেখেননি। কর্তৃপক্ষ বলছে, এরকম বন্যা অন্তত বিরল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার অনেক কারণ আছে তবে জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এরকম অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তাছাড়া ইয়েলো রিভার অববাহিকায় ব্যাপক বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি নেমে যাবার স্বাভাবিক পথগুলো ব্যাহত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন।-বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : চীন বন্যা

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //