মস্কোর বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা নয়: চীনা কর্মকর্তা

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সপ্তম দিন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই হামলার জেরে মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়ার এই হামলার বিষয়ে চীনের অবস্থান সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে বুধবার (২ মার্চ) চীনের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান চায়না ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিটির (সিবিআইআরসি) প্রধান গুয়ো শুকিং জানিয়েছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেবে না বেইজিং।

তিনি বলেন, একইভাবে সব পক্ষের সঙ্গে স্বাভাবিক আর্থিক সহযোগিতাও বজায় রাখবে চীন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওই রুশ হামলা নিয়ে চীনের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ চীনের অবস্থান কেমন হবে, তা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন গুয়ো শুকিং। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা রকম (একতরফা) নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত হব না। আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক আর্থিক সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের অবস্থান আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, চীনের অর্থনীতিতে রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এই মুহূর্তে খুব একটা স্পষ্ট নয়। ভবিষ্যতেও তাৎপর্যপূর্ণ কোনো প্রভাব পড়বে না।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরপরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সমালোচনা করেছে বেইজিং। দেশটির যুক্তি, এতে ইউক্রেন সংকটের সমাধান হবে না।

গত সপ্তাহে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং বলেছিলেন, ‘চীনা সরকারের অবস্থান হলো, আমরা বিশ্বাস করি নিষেধাজ্ঞাগুলো কখনোই সমস্যা সমাধানের মৌলিক এবং কার্যকর উপায় ছিল না। চীন সর্বদা যেকোনো অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে।

চুনিয়াং ওই সময় আরও বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ১০০ বারের বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা শান্তভাবে ভাবতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় কি সমস্যার সমাধান হয়েছে?’

রাশিয়া চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মাসে বেইজিংয়ে অলিম্পিক গেমসের সময় সাক্ষাৎ করেন। এরপর দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁদের বন্ধুত্বের কোনো সীমা নেই। তবে ইউক্রেন ইস্যুতে স্পষ্টভাবে চীন কোনো পক্ষ নিচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেছেন, সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সব সময় সম্মান করে চীন। তবে ইউক্রেন ইস্যুকে আলাদাভাবে দেখার পক্ষে তিনি। ওয়াং বলেন, ইউক্রেন ইস্যুটি জটিল। নিরাপত্তা ইস্যুতে রাশিয়ার যে উদ্বেগ রয়েছে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল চীন।

ইউক্রেন সংকট সমাধানে চীন যে আলোচনা কূটনীতির ওপর জোর দিচ্ছে, তা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা স্পষ্ট। এদিকে ইউক্রেন সংকট নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন সংকট আর যাতে না বাড়ে, সেই আহ্বান জানান।

গত সোমবার তিনি বলেন, চীন সব সময় বিশ্বাস করে, সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। ইউক্রেন সংকট সমাধানের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি এবং যাওয়া উচিত নয়। ইউক্রেন পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য আলোচনায় সহযোগিতা করবে চীন।

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আগেই স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ছাড়তে হবে। নতুন স্নায়ুযুদ্ধ উসকে দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সবাইকে হারতে হবে।

রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের চীনা দূতাবাস দেশটিতে থাকা চীনের নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছে। সেখানে চীনা নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আশঙ্কার কথা বলেছে দূতাবাস। গত মঙ্গলবার চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ছাড়া অনেক এশীয় নাগরিক হামলার সম্মুখীন হচ্ছে। চীনের নাগরিকদের মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তালিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //