মিয়ানমারের কনসার্টে বিমান হামলা, নিহত ৮০

মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে একটি কনসার্টে সামরিক জান্তার বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জেনারেলদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে। হামলায় জাতিসংঘও উদ্বেগ জানিয়েছে।

গত রবিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস অর্গানাইজেশনের (কেআইও) ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস আর্মির কর্মকর্তা, সংগীত ও অভিনয়শিল্পী, জাদে পাথরখনির মালিকসহ শত শত বেসামরিক লোক অংশ নিয়েছিলেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এটিই সবচেয়ে নৃশংস হামলা।

অনুষ্ঠানটি ইয়াঙ্গুনের ৯৫০ কিলোমিটার উত্তরে পাহাড়ি এলাকায় আয়োজন করা হয়। এলাকাটি কেআইওর সামরিক শাখা কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস আর্মির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

মিয়ানমারে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস আর্মি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি। তারা অস্ত্র-সরঞ্জাম তৈরিতে সক্ষম। কাচিন আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের একজন মুখপাত্র গত সোমবার ফোনে সাংবাদিকদের জানান, ওই কনসার্ট অনুষ্ঠানে জান্তার সামরিক বিমান চারটি বোমা ফেলে। 

অনুষ্ঠানে সংগীত ও অভিনয়শিল্পীসহ অন্তত ৫০০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন। নিহতদের মধ্যে দুজন শিল্পী ছিলেন, যারা আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন তাদের নাম প্রকাশ না করতে। কারণ, তাদের আশঙ্কা ছিল, জান্তা কনসার্টে হামলা করতে পারে। হামলার পর ঘটনাস্থলে ছিন্নভিন্ন লাশ ও মঞ্চ তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ-কাঠের টুকরো দেখা গেছে। 

কাচিন নিউজ গ্রুপ জানিয়েছে, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসায় বাধা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে জান্তা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নির্বিচারে হামলার জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা ও বিমানের জ্বালানির উৎস বন্ধ করে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বেসামরিক সমাবেশে বোমা হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অল কাচিন স্টুডেন্টস ফেডারেশন।

অ্যামনেস্টির ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক হানা ইয়াং এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারজুড়ে সামরিক জান্তা হামলা চালিয়ে আসছে। ওই এলাকাটি কাচিন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। বহু সংখ্যক বেসামরিক লোকের ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিষয়টি জান্তা সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। 

এদিকে সামরিক কর্তৃপক্ষের তথ্য অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিদ্রোহী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস আর্মির নবম ব্রিগেডের সদরদপ্তর হওয়ায় ওই স্থানটিতে হামলা করা হয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এটি জরুরি অপারেশন। কনসার্টে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গায়ক কিংবা শ্রোতা কেউ নিহত হননি।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জান্তা সরকার বেসামরিক লোকদের সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরই জান্তাবিরোধী ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)’ জনগণের সরকার ফিরিয়ে আনতে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এতে দেশটির বিভিন্ন অংশে এক প্রকার যুদ্ধ চলছে। হামলা-পাল্টা হামলায় প্রতিনিয়ত নিহত হচ্ছেন বেসামরিক মানুষ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //