আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স ২০২৩

কর্ম-পরিবেশের তালিকায় বাজে অবস্থানে বাংলাদেশ

বিশ্বের মধ্যে কর্মজীবী মানুষের জন্য সবচেয়ে বাজে ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩০ জুন) ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) প্রকাশিত বৈশ্বিক অধিকার সূচক-২০২৩ (গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স-২০২৩) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের পরে তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হলো- বেলারুশ, ইকুয়েডর, মিশর, গুয়াতেমালা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, হংকং, ইরান, ইরাক, দুবাই, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, চীন, জিম্বাবুয়ে,কোরিয়া, এসোয়াতিনিসহ বেশ কিছু দেশ। 

ব্রাসেলসভিত্তিক এই সংস্থাটি ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর বৈশ্বিক অধিকার সূচক প্রকাশ করে আসছে । এরা আগে ২০২২ সালে ১৪৯টি দেশে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা হচ্ছে কিনা এমন তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এবারের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আইটিইউসি।

নায্য পাওনা আদায়ে ধর্মঘটের অধিকার, শ্রমিকদের সংগঠন সিবিএ’র প্রকৃত ক্ষমতা, ট্রেড ইউনিয়নের প্রকৃত কার্যাবলী ও অধিকার, শ্রমিকদের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রমিক হয়রানি ও সহিংসতা, ন্যায়বিচার ও শ্রমিক হত্যার মত বিষয়গুলকে বিবেচনায় এনে প্রতিবেদনটি প্রস্তত করেছে আইটিইউসি।   

এছাড়াও সংস্থাটি কর্মরত শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে দেশে দেশে সরকারের ভূমিকা এবং শিল্প কারখানার নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকারগুলো কিভাবে লংঘন করে সে বিষয়েও নজরদারি করে থাকে।

অন্যদিকে অঞ্চলগত দিক হতে খারাপ পরিবেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা, আমেরিকা,  ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো। 

আর বিশ্বে যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিক আইন লংঘন করে আসছে এমন তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার মিয়ানমারের বেস্ট চয়েস গার্মেন্ট কোম্পানি, পু চেন জুতা কারখানা, নেপালের মনিপাল টিচিং হসপিটাল। অন্যদিকে এশিয়ার অন্যতম শ্রমবাজারের জন্য বিখ্যাত মালয়েশিয়ার মোলেক্স মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সেনহুয়া হুয়া লিওন পাওয়ার, পিটি তাইনান এন্টারপ্রাইজ ও ভারতের ইয়ামাহা মোটরস, স্লাম ক্লোথিং প্রাইভেট লিমিটেড , ভিরাজ স্টিল লিমিটেড। 

শ্রমিকদের অধিকার বিবেচনায় এই প্রতিবেদনে সূচকের স্কোর ধরা হয় ১ থেকে শুরু করে ৫+  এর মধ্যে। 

সূচকে দেখা যায়, ৩ পয়েন্ট নিয়ে কম মন্দ অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চিলি আর গিনিয়া বিসাউ ৪ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে বেশ ভাল অবস্থানে। 

সূচকের প্রতিটি পয়েন্টের রয়েছে একটি করে আলাদা ব্যাখা। মানের দিক হতে ১ হলো বিক্ষিপ্তভাবে শ্রমিক অধিকার লংঘনকে বুঝিয়ে থাকে। আর ৫+ হলো- কোন রকমের  শ্রমিক অধিকার নেই এমনটি বুঝানো হয়। 

আর সূচকের ২,৩,৪,৫ যথাক্রমে বোঝায় অধিকার হরণ প্রায়ই হয়ে থাকছে, প্রতিনিয়ত শ্রমিক অধিকার লংঘন, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শ্রমিক অধিকার লংঘন , অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

আর এই সুচক অনুযায়ী ৫ স্কোর (অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই) নিয়ে আলজেরিয়া ও বাহরাইনের পরেই তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।   

বৈশ্বিক অধিকার সূচকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এখানে শ্রমিকের অধিকার ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার নামে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে মত প্রকাশে বাধা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শিল্পখাত পোশাকশিল্পে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। সেখানেও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা দেওয়া হয়। শিল্প পুলিশ পোশাকশিল্পে ধর্মঘট দমন করে থাকে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষ, সংঘর্ষ, ইউনিয়নের মধ্যে অসন্তোষ, শ্রমিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাহ্য করার মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না।

এ বিষয়ে আইটিইউসি বলছে, গত বছর ৪ জুন গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলা ধর্মঘটে পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছোঁড়ে। ফলে মিরপুর ও আজমপুরে বেশ কিছু শ্রমিক আহত হন। 

এছাড়াও চৈতি গার্মেন্ট, ইনট্রাকো ফ্যশন, ইনট্রাকো ডিজাইন, এমবিএম গার্মেন্ট, ভিশন গার্মেন্ট, আইডিএস গ্রুপ, কলকা গার্মেন্ট ও ডিমক্সের কয়েক হাজার শ্রমিক তাদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য রাস্তায় অবরোধ করেন। এসময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মজুরি বাড়াতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাতে রাস্তায় নামেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের  শ্রমিক সংগঠনগুলোতে যোগ না দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে। 

বর্তমানে ৫ লাখ শ্রমিক এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) কর্মরত রয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে  এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন আইন-২০১৯ প্রণয়নের ফলে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ব্যতীত সিবিএ বা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেনা এমন বিধান থাকায় তাদের অধিকার লংঘন হচ্ছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। 

আইটিইউসির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লুক ট্রায়াঙ্গেল বলেন, গণতন্ত্রের মানের সঙ্গে শ্রমিকের অধিকার সমুন্নত রাখার পরিষ্কার সম্পর্ক রয়েছে। গণতন্ত্রের মূলে যে আঘাত করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হলো।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর্ম-পরিবেশের বাজে ১০টি দেশের ৯টিতেই আইনসংগত ধর্মঘটে যাওয়ায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়ে থাকে। এরমধ্যে ৭৭ ভাগ দেশ ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা ও তাতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে থাকে। আর ৪২ ভাগ দেশে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের মতো দেশেও পুলিশ দিয়ে বেধড়ক পিটুনির মাধ্যমে শ্রমিকের প্রতিবাদ দমন করা হয়।

সূত্র: আইটিইউসি ওয়েব সাইট 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //