তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ শনিবার

দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিগত বছরজুড়ে চীনের নজরদারিতে রয়েছে তাইপে। ফলে এ নির্বাচন ঘিরে বহির্বিশ্বেও রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের। নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীরা চালিয়েছেন জোর প্রচারণা। 

শেষদিন আজ শুক্রবারও (১২ জানুয়ারি) প্রচার মাঠ গরম রাখেন প্রার্থীরা। ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চেয়ে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি ফোকাসেই বেশি নজর রাখছেন তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। 

চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপক‚লে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রটি মূলভ‚খণ্ড (চীন) থেকে মাত্র ১৮০ কিলোমিটার দূরে। পূর্ব চীন সাগরের  ‘তাইওয়ান প্রণালী’র তীরে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রটির তিন দল গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিন ঢেউয়ে ভাসছে। 

তাইওয়ানের প্রধান দলগুলো হলো- ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি), তাইওয়ানস পিপলস পার্টি (টিপিপি) এবং দ্যা কুওমিনটাং (কেএমটি)। দেশটির প্রধান এই তিনটি দলই এবার নির্বাচনে একে অপরের প্রতিপক্ষ। তিন দলেই ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ। এদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রচণ্ডভাবে তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব এবং স্বতন্ত্রতায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ তারা কখনোই তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে মনে করে না। এক কথায় স্বায়ত্তশাসন। অন্যদিকে পিপলস পার্টি পুরোপুরি চীনপন্থি দল। 

তাদের মতে,  চীনের ছায়া তাইওয়ানের জন্য মঙ্গল। আর সবচেয়ে ছোট দল কুওমিনটাংয়ের নীতি ‘ভারসাম্যে’। নিজের স্বাধীনতা অটুট রেখে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখায় বিশ্বাসী। 

তাইওয়ানের সংসদ ‘ইউয়ান’ ১১৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। যারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরাসরি চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। এবারের নির্বাচনে প্রায় ১৯.৫ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটার ভোট দিতে পারবেন। যাদের মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ১৩ লাখ। প্রধান তিনটি দলের মধ্যে অন্যতম ডেমোক্রেটিভ প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)। টানা আট বছর ক্ষমতায় ছিল দলটি। তবুও জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবনমানের উন্নতি করতে পারেনি। ফলে এবারের নির্বাচনে বেশ রোষানলের মুখে পড়েছে এ পার্টি। 

ক্রমবর্ধমান বাড়ি ভাড়া, স্থবির আয়, বেকারত্ব এবং জিডিপি হ্রাসে এ পার্টির বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। তবে এবার ডিপিপি পার্টি থেকে প্রধান হিসাবে দাঁড়িয়েছেন লাই চিং তে (৬৪)। তিনি দলটির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। পেশায় সাবেক চিকিৎসক লাই তাইওয়ানের সব রকমের শীর্ষ রাজনৈতিক পদেই দায়িত্বে ছিলেন। দলীয় বিশ্বাসে তিনিও তাইওয়ানের স্বতন্ত্রসত্তার পক্ষে একজন ঘোর সমর্থক। নির্বাচনি ইশতিহারে লাই তাইওয়ানের জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল কেএমটি থেকে দাঁড়িয়েছে হউ ইউ-ই (৬৬)। তিনি একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। একজন মধ্যপন্থি হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে তার। 

২০২২ সালে নিউ তাইপে সিটির মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার জন্য প্যান ব্লু জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে মিলিত হওয়ায়ও বিশ্বাসী। নির্বাচনি প্রচারণায়ও তিনি স্লোগান দিচ্ছেন- জনগণ ‘যুদ্ধ নাকি শান্তি’ চায় তা বেছে নিতে। সর্বশেষ পিপলস পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন কো ওয়েন-জে (৬৪)। তিনি একজন সাবেক সার্জন ছিলেন। পাশাপাশি ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাইপেইয়ের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চীন এবং তাইওয়ানে সম্পর্কে টিপিপির অবস্থান এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ। দলটি কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বাসী। এমনকি সেটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র  উভয়ের সঙ্গেই হতে পারে। তরুণ ভোটাররা প্রার্থী হিসাবে ওয়েন-জে কে বেশ পছন্দ করছে। সবাই তার সরল দৃষ্টিভঙ্গির বেশ প্রশংসা করছে। কেননা তিনি নির্বাচনী ইশতিহারে আবাসন এবং শিক্ষার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে অসংখ্য তরুণ ভোটারেরই কে ক্ষমতায় গেল সেসবে মাথাব্যথা নেই। তারা শুধু চাকরি চায়। 

২০২৩ সালের ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের এক জরিপে দেখা যায়, ৩৪.২ শতাংশ লোক এমন একটি দলকে চায়, যারা তাদের অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে।

সূত্র- রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //