চিকিৎসার মান বাড়ানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

দ. কোরিয়ায় চিকিৎসকদের ধর্মঘট

মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ায় স্বাস্থ্যখাতে আরও চিকিৎসক বাড়ানোর প্রতিবাদে কাজ থেকে ওয়াকআউট করেছেন দেশটির কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি জুনিয়র ডাক্তার। আর  ধর্মঘটে চলে যাওয়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হওয়া শুরু হয়েছে। 

জানা গেছে, এই প্রতিবাদের সাথে আরও চিকিৎসক যোগ দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আর এ অবস্থায় তাদেরকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। 

এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা এই ব্যবস্থায় আরও প্রশিক্ষিত চিকিৎক চালু করার জন্য সরকারের নেয়া পরিকল্পনার প্রতিবাদ করছেন। সোমবার পদত্যাগ করেছেন কমপক্ষে ৬ হাজার ইন্টার্ন এবং আবাসিক চিকিৎসক। 

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) জানায়, দেশগুলোর মধ্যে রোগী প্রতি চিকিৎসকের হার সবচেয়ে কম দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর ফলে বিশাল প্রতিযোগিতামূলক  অবস্থার বিরোধিতা করছেন চিকিৎসকরা। 

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেসরকারিভিত্তিক হওয়ায় বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় ইন্স্যুরেন্স পেমেন্টের হিসেবে। শতকরা কমপক্ষে ৯০ ভাগ হাসপাতালই বেসরকারি। আর বিশ্বে সবচেয়ে ভালো বেতন দেয়া হয় এখানকার চিকিৎসকদের।

২০২২ সালে প্রকাশিত ওইসিডির তথ্যে দেখা যায়, সেখানে সরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ বছরে গড়ে প্রায় দুই লাখ ডলার (২ লাখ মার্কিন ডলার) বেতন পান। জাতীয় গড় বেতনের চেয়ে যা কিনা অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও সেখানে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ২.৫ জন ডাক্তার। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকোর পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান। 

সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সুনমান খৌন বলেন, অধিক সংখ্যক ডাক্তার থাকার অর্থ হলো অধিক পরিমাণ প্রতিযোগিতা। তাতে তাদের আয়ও কমে যাবে। এ জন্য চিকিৎসক বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার কাজে যোগ দেননি ১৬৩০ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে ৬৪১৫ জনের বিশাল একটি গ্রুপ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন আয়োজকরা। 

এ প্রসঙ্গে সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য বিষয়ক দ্বিতীয় ভাইস মন্ত্রী পার্ক মিন-সু বলেন, ট্রেইনি ডাক্তাররা কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এতে আমরা গভীরভাবে হতাশ। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদেরকে কাজে ফেরাতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। 

দেশটির মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যাক্টের অধীনে কর্তৃপক্ষ যেকোনো ডাক্তারের প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা রাখে। এটাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হুমকি বলে মনে করা হয়। অন্য চিকিৎসকদের প্রতিবাদের বিষয়ে আগেই কর্তৃপক্ষ তাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। 

মন্ত্রী পার্ক বলেন, আমরা তাদেরকে দলে দলে কাজে যোগ দেয়ার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি। 

এদিকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের এমন বিরোধিতার নিন্দা জানিয়েছে সরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু বলেন, চিকিৎসকরা এমন একটি বিষয়কে বেছে নিয়েছেন, যাতে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে জিম্মি করা হয়েছে। তাদের এই ধর্মঘটের ফলে কি প্রভাব পড়ছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, সার্জারিতে বিলম্ব ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় কিছু হাসপাতাল বিকল্প পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। 

এর আগে ২০২০ সালেও চিকিৎসকদের এমন বিক্ষোভ দেখা যায়। ওই সময় চিকিৎসক নিয়োগে সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতায় ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন শতকরা ৮০ ভাগ চিকিৎসক। 

উল্লেখ্য, দেশটিতে প্রবীণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। আর এমনটা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে সেখানে ১৫ হাজারের বেশি ডাক্তারের ঘাটতি দেখা দেবে। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করেছেন নীতিনির্ধারকরা।   

সূত্র: বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //