কবে সংস্কার হবে অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের?

মাদার গেমস হিসেবে পরিচিত অ্যাথলেটিক্স। একজন খেলোয়াড় যদি শারীরিকভাবে ফিট থাকেন তাহলে তার পক্ষে বড় কিছু করা সম্ভব হয়। 

কিন্তু রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক ট্র্যাক দেখলে বিষয়টি নিয়ে যে কেউ ধন্ধে পড়ে যেতে পারেন। কারণ কড়া লাল রঙের ট্র্যাকটির অনেক জায়গায় জোড়াতালি দেয়া দেখা যায়। খালি পায়ে কিংবা বুট পরে, যেভাবেই কেউ দৌড়ায় না কেন দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। 

৭ বছর পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের আসর করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে গেছে। সেখানে থাকত অ্যাথলেটিক্স সামনের সারিতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গেমস হিসেবে পরিচিত এই খেলার প্রধান ডিসিপ্লিনটি অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে; কিন্তু সেখানকার অ্যাথলেটিক ট্র্যাক নিয়ে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। খালি চোখেই ট্র্যাকের নানা সমস্যা চোখে পড়বে। যেখানে খালি পায়ে হাঁটতে গেলে ভয় লাগে, সেখানে খেলোয়াড়রা খেলতে গেলে যেকোনো বিপদের মুখে পড়তে পারেন। 

সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ঘাসের মাঠে। সে কারণে এই খেলাটির দৈন্যতা দিনে দিনে ফুটে উঠেছে। যেমন করে অ্যাথলেটিক্সের হোম ভেন্যু হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ট্র্যাকের অবস্থা বেশ নাজুক। গেল দুই যুগেরও বেশি সময়ে অ্যাথলেটিক্স পেছাতে পেছাতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শত চেষ্টা করেও আর আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। 

ছোট ছোট সাফল্য অ্যাথলেটিক্স নিয়ে সাধারণের আগ্রহ তৈরি করছে না। ট্র্যাকের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখলে সহজেই অনুমান করা যাবে কোথায় আছে এক সময়কার জনপ্রিয় খেলাটি। গেল ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ এসএ গেমসে রেকর্ড ১৯টি স্বর্ণ পদক জেতে বাংলাদেশ। অথচ সেখানে একটিও পদক নেই অ্যাথলেটিক্স থেকে। যে মালদ্বীপ একটা সময় খাবি খেয়েছে সেই দেশটিও এখন ট্র্যাকে নামলেই স্বর্ণপদক জিতছে। যা বাংলাদেশের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি হতাশারও। 

ভবিষ্যতে যে ভালো কিছু নেই সেটিও এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ এখন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই এই ডিসিপ্লিন নিয়ে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আসরে অংশগ্রহণ বাড়লেও বাড়েনি পদকের সংখ্যা, যেমন করে কমেছে প্রত্যাশাও। এই অবস্থার মধ্যে ১-১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলেও তা আপাতত হচ্ছে না। 

দেশের অ্যাথলেটিক্সের তীর্থস্থান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। সময়ের হিসাবে এরপর কেটে গেছে ১৪ বছর। এই সময় ব্যবহারের পাশাপাশি যত্নআত্তি কম নেয়ার কারণে এখন জীর্ণদশা দেখা যাচ্ছে। সংস্কার হলেও বেড়েছে ঝুঁকি। ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় জোড়াতালি দেয়া হয়েছে। যা খালি চোখে সহজেই ধরা পড়বে। সর্বশেষ জাতীয় আসরের সময় কয়েকজন খেলোয়াড় দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। তবুও গুরুত্ব দেয়া হয়নি এই ট্র্যাকের। 

নতুন একটি অ্যাথলেটিক ট্র্যাক এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দৌড়ানোর সময় সেভাবে খেয়াল না করে দৌড়ালে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে অনেকেই বলেছেন। 

দেশের অ্যাথলেটিক্সকে গত প্রায় তিন দশক ধরে দেখা সাবেক অ্যাথলেট ও বর্তমানে বিকেএসপির কোচ আবদল্লাহ হেল কাফি কিছুটা হতাশা নিয়ে বলেছেন, ‘মাঠ যদি খেলার উপযোগী না হয় তাহলে খেলোয়াড়রা কীভাবে সেখানে খেলবে? আর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বর্তমান ট্র্যাক একেবারেই খেলার উপযোগী নয়। ট্র্যাকের কোনো ইভেন্ট আয়োজন করা যায় না, ফিল্ডের কিছুই ইভেন্ট করা যায় সেখানে। অ্যাথলেটরা শোনেন ট্র্যাক সংস্কার করা হবে, কিন্তু হয় না’। 

সংস্কার কিংবা নতুন ট্র্যাকের বিষয়ে কথা শোনা গেলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম ব্যবহারের কথা উঠলেও সে ব্যাপারে তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। অনাকাক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ গেমস বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পরিবর্তে বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান- বিকেএসপিতে গেমসের অ্যাথলেট ডিসিপ্লিনটি আয়োজনের বিষয়ে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু বলেন, ‘চাইলেই এখন ভেন্যু পরিবর্তনের তেমন একটা সুযোগ নেই। ভেন্যু পরিবর্তনের পাশাপাশি নতুন ট্র্যাক স্থাপনেরও সুযোগ এখন নেই’। 

এদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকার বাজেট করা হয়েছে যেখানে অ্যাথলেটিক ট্র্যাকও রয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নতুন ট্র্যাক লাগানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই স্টেডিয়ামে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে অন্ততপক্ষে ৫০ বার মঞ্চ বানানো হয়েছে। নানা সময় ট্র্যাকের ওপর দিয়ে বহুসংখ্যক ভারী যানবাহন আসা-যাওয়া করেছে। সে কারণে দিনে দিনে এই ট্র্যাক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। 

কয়েকমাস আগে জাতীয় অ্যাথলেটিকস চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ফেডারেশনকে। তবে সবদিক বিবেচনা করে মানতেই হচ্ছে, জীর্ণ এই ট্র্যাকেই বসবে বাংলাদেশ গেমসের অ্যাথলেটিক ডিসিপ্লিন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহসভাপতি বশির আল মামুন বলেন, ‘বর্তমানে যে ট্র্যাকটি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রয়েছে সেটা দৌড়ানোর উপযোগী না থাকায় ট্র্যাক সংস্কার করার জন্য আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। এখন আশা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা কিছু করতে পারি কিনা সেটি ভাবছি’। 

পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্স এ এখন জাতীয় আসরেও খেলা হয়ে হ্যান্ড টাইমিংয়ে। যা একটি খেলার জীর্ণতা বোঝাতে যথেষ্ট। সার্বিক বিষয় চিন্তা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ট্র্যাকটি পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে অ্যাথলেটিক্সের জন্য, যা থেকে উপকৃত হবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনও।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //