শুটিংয়ের আশার আলো কামরুন নাহার কলি

একক ডিসিপ্লিন হিসেবে শুটিং বাংলাদেশের সবেধন নীলমণি ছিল। কিন্তু আব্দুস সাত্তার নিনি, আতিকুর রহমান, সাবরিনা সুলতানা, আসিফ হোসেন খানদের দেখিয়ে দেওয়া পথে এগিয়ে যেতে পারেননি খেলোয়াড়রা। যে আসিফের সঙ্গে ২০০২ সালের কমনওয়েলথ গেমসে হেরে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন ভারতের অভিনব বিন্দ্রা, তিনিই ২০০৬ অলিম্পিক গেমসের স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। আর আসিফ অসাধারণ প্রতিভা নিয়েও খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। যা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনন্ত এক আক্ষেপ হয়ে আছে। সেখানে হঠাৎ করে আবির্ভাব হয়েছে কামরুন নাহার কলির। টানা কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভালো করায় এখন তাকে ঘিরেই পদক জয়ের আশা বাড়ছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেন তিনি। 

এবার কলিকে ঘিরেই অলিম্পিকের কোটা প্লেস পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক শুটিংয়ে পথচলা তার। সাম্প্রতিক সময়ে তার মতো ধারাবাহিক শুটার খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২৮.৪ স্কোর গড়ে ষষ্ঠ হয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন কলি। যদিও পদকের লড়াইয়ে নিজেকে শামিল করতে পারেননি। 

প্রথমবারের মতো কোটা প্লেস পদ্ধতিতে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। বিশ্ব শুটিংয়ে ইতিহাস গড়া ওই সাফল্যের পর অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এই শুটার। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে প্রথম ধাপ হিসেবে কোটা প্লেস অর্জন করতে হবে। চলতি বছর দুটি বিশ্ব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া শুধু শুটিংয়ের জন্য ইউনিভার্সিটি গেমসেও রয়েছে কোটা প্লেস অর্জনের সুযোগ। এই সুযোগগুলোকে কলি নিজের স্বপ্ন পূরণের মঞ্চ হিসেবে দেখছেন। কোটা প্লেসের মাধ্যমেই কেবল আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই নিজেকে বড় আসরের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

তবে দেশের অন্যান্য শুটারের মতো নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। সেই হতাশা নিয়ে কলি বলেন, ‘যে কোনো খেলায় যত বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে একজন খেলোয়াড় খেলবে তত বেশি অভিজ্ঞ হবে; যা তাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো আসরের জন্য আত্মবিশ্বাস জোগাবে। জাকার্তায় ফাইনাল খেলার পর গত এক বছরের মধ্যে মাত্র দুটি আসর খেলার সুযোগ পেয়েছি আমি। অথচ সেই আসরে খেলা অনেকেই এর মধ্যেই পাঁচ-ছয়টি আসর দেশের হয়ে খেলেছে। আমিও সবার মতো খেলার সুযোগ পেলে আমার স্কোরও আগের চেয়ে বেশি হতো।’ 

কলি তার স্বপ্নকে অলিম্পিকের স্বর্ণপদকে পরিণত করতে চান। যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কলি, তাতে এই স্বপ্ন সত্যি করা  অসম্ভব নয়। অনুশীলনে এখন নিয়মিতই ৬৩০-৬৩১ স্কোর করছেন। আর আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে ৬২৮-৬২৯ স্কোর করার ফলে তাকে নিয়ে প্রত্যাশাটা আরও বাড়ছে। কলিকে নিয়ে তার কোচরাও স্বপ্ন দেখছেন। এসএ গেমস ও কমনওয়েলথ গেমস শুটিংয়ে স্বর্ণজয়ী শারমিন আক্তার রত্না বর্তমানে সহকারী কোচ হিসেবে জাতীয় দলের দায়িত্বে রয়েছেন। রত্না ও কলিকে নিয়ে বড় স্বপ্নই দেখছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলির মতো ধারাবাহিক শুটার বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। মেয়েদের মধ্যেই নয়, ছেলেদের চেয়েও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো স্কোর করছে সে।’ 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //