জয়ের নেশায় অদম্য অভিক

আমরা করবো জয়! আমরা 
করবো জয়!
আমরা করবো জয়! নিশ্চয়!
আহা বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়!
আমরা করবো জয়!

পিট সিগারের লেখা ইংরেজি গান। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বঙ্গানুবাদে পরিণত হয়েছে বাংলার জনপ্রিয় গণসংগীতে। এই গান যুগ যুগ ধরে অনুপ্রাণিত করছে বাঙালি জাতিসত্তাকে। গানটি আমাদের যে কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক লড়াইয়ে উদ্দীপনা জোগায়। খেলাধুলার জগতেও ‘আমরা করবো জয়’ যেন বিজয়ের অব্যর্থ মন্ত্র। 

এই গানের কথাগুলো দারুণ মিলে যায় বাংলাদেশি যুবক অভিক আনোয়ারের সঙ্গে। অভিক বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার মোটর কার রেসার। মার্চেই গড়েছেন নতুন ইতিহাস। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অর্জন করেছেন মোটর রেসের কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব। অভিকের এই অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপে। দুবাই অটো ড্রোমে অনুষ্ঠিত এ রেসে ১৭ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বাংলাদেশ, ভারত, ইউএই ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের প্রতিযোগীরা ছিলেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মোটর স্পোর্টস দলের হয়ে তিনি শিরোপা অর্জন করেন। এটাই বাংলাদেশি রেসিং ড্রাইভার হয়ে অভিকের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ছয় রাউন্ডে শেষ হয় প্রতিযোগিতা। ছয় রাউন্ডের গড়ে ন্যাশনাল রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপে অভিক হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালে এফ-ওয়ানে ব্যাক টু ব্যাক ও ইউএই গালফ প্রো কার চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হয়েছিলেন এই রেসার।

মালয়েশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ ২০২২-এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন অভিক।

অভিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য পেয়েছেন আগেও। তবে সেটা ভিনদেশের দলে বাংলাদেশি সদস্য হিসেবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ ‘এমআরএফ এমএমএসসি এফএমএসসিআই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কার রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩’ টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন অভিক। আট নম্বর রেসের শেষ ল্যাপে দ্বিতীয় হন তিনি। সব মিলিয়ে অবস্থান তৃতীয়।

তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইতে ৫০ বছর বয়সী মাদ্রাজ মোটর রেস ট্র্যাকে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের জাতীয় পর্যায়ের মোটর রেসের কোনো টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জনের কৃতিত্ব দেখান। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য দ্বিতীয় স্থান হাতছাড়া হয় তার। অভিক টুর্নামেন্টে ভক্সওয়াগন পোলো গাড়ির বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। মোট ১৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশি।

মোটর রেসিংয়ে অভিকের আন্তর্জাতিক সাফল্য বিস্ময় জাগায়। একে তো ব্যয়বহুল এই খেলা সাধারণের নাগালের বাইরে। আবার সামর্থ্যবানদের মধ্যেও মোটর রেসিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো সাহসীর সংখ্যা কম। হ্যাঁ, মোটর রেসিং দুর্বলচিত্তের মানুষের কম্ম না। আধুনিক যন্ত্রযানে ঘণ্টায় ৩০০/৪০০/৫০০ কিলোমিটার গতির ঝড় তুলে ট্র্যাক দাবড়ে বেড়ানোর মতো ঝুঁকি কজন নিতে পারেন! সাহসী অভিক পেরেছেন সেই ঝুঁকি নিতে।

গালফ প্রো-কার অ্যান্ডুরেন্স চ্যাম্পিয়ন অভিক।

অভিকের বাবা মো. আনোয়ার হোসেনের ছিল গাড়ির ব্যবসা। সেই সূত্রে গাড়ির সঙ্গে সখ্য। টিভিতে ফর্মুলা ওয়ানে মাইকেল শুমাখারদের দেখতেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। রেসার হওয়ার স্বপ্নের বীজটা মনের মধ্যে রোপণ হয়ে গিয়েছিল তখনই। আর বাবা ছিল অভিকের জীবনের অনুপ্রেরণা। তার বাবা ২০২৩ সালের ১১ জুলাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। বাবার মৃত্যুতে নিজেকে বেশ কিছুদিনের জন্য গুটিয়ে নেওয়া অভিক সম্প্রতি অংশ নিয়েছেন ‘মালয়েশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ ২০২৩’-এ। পেয়েছেন অভাবিত সাফল্য। সেপাং ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটের রাউন্ড-৩-এর রেস-২-এ প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। রাউন্ড-১-এ পোডিয়াম অর্জন করেছিলেন এই রেসার। বর্তমানে সব মিলিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন অভিক।

আগস্টের শেষ সপ্তাহে পাওয়া সাফল্য সদ্যপ্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করেন অভিক। বাবার মৃত্যুপরবর্তী পথচলাটা সহজ ছিল না। অভিক বলেন, ‘আমাকে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা রেস না করার পরামর্শ দিয়েছিল। বাবাকে আমি সবচেয়ে বেশি মিস করেছি।’

সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে মালয়েশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের রাউন্ড ফোরে ৫৮ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অভিক। একাধিক ইনজুরি নিয়েও একাই প্রায় তিন ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন অভিক। বেশিরভাগ প্রতিযোগীর দলে দুই জন থাকলেও তিনি তার অর্জনে অন্য দেশকে আনতে চাননি বলে একাই ঝুঁকি নিয়ে পথ পাড়ি দিয়েছেন। তিনি দেশের সুনাম বয়ে আনতে এ ঝুঁকি নিয়েছেন বলে জানান অভিক। তার কথা, ‘আমি কাউকে বলতে দিতে চাই না যে অন্য কোনো দেশের সহায়তায় আমি জিতেছি। পুরো অর্জনটাই বাংলাদেশের।’

১১ বছর বয়সে গাড়ি চালানো শেখেন অভিক। কিন্তু গাড়ি চালাতে পারা আর মোটর রেসিং দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশে মোটর রেসিং প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এখানে এই খেলার জন্য নেই কোনো দক্ষ প্রশিক্ষক, নেই কোনো রেসিং ট্র্যাক। তাই বাংলাদেশের মাটিতে নিজেকে একজন রেসার হিসেবে গড়ে তোলা ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু থেমে থাকেননি অভিক। প্লে স্টেশনের গেম আর সিমুলেটর ছিল ভরসা। প্লে স্টেশনে খেলতেন গ্র্যান ট্যুরিসমো স্পোর্ট। বন্ধুরা প্রায়ই উপহাস করতেন আর বলতেন, ‘এসব অবাস্তব গেম খেলে কী হবে?’ বন্ধুদের বোঝাতেই পারতেন না যে, এই খেলার সঙ্গে বাস্তবে গাড়ি চালানোর কতটা মিল রয়েছে।

মালয়েশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ ২০২৩-এ প্রতিযোগীদের সঙ্গে অভিক।

অভিকের স্বপ্ন ডানা মেলা শুরু করল কানাডায় পড়াশোনা করতে গিয়ে। ২০০৭ সালে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনমিক্সে পড়াশোনার জন্য ডাক পান। কিন্তু মোটর কার রেসিং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কী করা যায়? নিজেই পড়াশোনার ফাঁকে শুরু করলেন পার্টটাইম জব। মোটর রেসার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অভিক পিৎজা ডেলিভারিম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। এমনও দিন গেছে, অভিক মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হাড় কাঁপানো শীতে পিৎজা ডেলিভারির কাজ করেছেন শুধু টাকা জমিয়ে রেসিং ট্র্যাকে নিজের পদচিহ্ন আঁকার জন্য। এভাবে অমানবিক পরিশ্রম করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টাকা জমান। জমানো টাকাকে পুঁজি করে সে বছরই তিনি টরন্টোতে অবস্থিত রেসিং ট্র্যাক টরন্টো মোটর স্পোর্টস পার্কে প্র্যাকটিস শুরু করেন। এই রেসিং ট্র্যাকে প্র্যাকটিস করার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। অভিকের ভাষ্যমতে, প্রতি দুই ঘণ্টা প্র্যাকটিসের জন্য গুনতে হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা! তাও আবার নিজের গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। এভাবে তিন বছর চলার পর ২০১২ সালে পড়াশোনা শেষে ফিরে আসেন ঢাকায়।

অদম্য মানসিকতায় যে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সাফল্য পাওয়া সম্ভব, জ্বলন্ত উদাহরণ অভিক। তার পরিশ্রম বৃথা যায়নি। কাানাডায় হাত পাকিয়ে দেশে ফেরা অভিক শুরু করেন প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে অংশগ্রহণ। ২০১৪-১৬ পর্যন্ত টানা তিনবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে র‍্যালি ক্রস চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হন। পরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অভিক ভিনদেশের ট্র্যাকে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই জন্য ভারতে পরীক্ষা দিয়ে তাকে নিতে হয়েছে রেসার লাইসেন্স। ২০১৭ সাল থেকে ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু। 

অভিক প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বাংলাদেশ মোটর স্পোর্টস’। নিজে রেসিং করছেন, গড়ে তুলছেন নতুন রেসার। মোটর রেসিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই খেলায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ২০১৯ সালে জেট ইঞ্জিনের গতিতে গাড়ি চালানো জেসি কম্বের মৃত্যু সকলের মনে দাগ কেটে আছে। বাংলাদেশের অভিকও ফর্মুলা কারের অনুশীলনের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাত ভেঙেছেন। গতি, রোমাঞ্চ, তুমুল প্রতিযোগিতা- এসব মিলেই মোটর রেস। গতি যেখানে অসীম, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাই বলে তো সাহসীরা থেমে থাকেন না। হিমালয় জয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও অভিযাত্রীরা সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখার অদম্য নেশায় ছুটছেন।

অভিক প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বাংলাদেশ মোটর স্পোর্টস’।

অভিক নিজেও অভিযাত্রী। তিনি মোটর রেসিং কার নিয়ে জয় করতে চান বিশ্ব। বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে চান বিশ্বমঞ্চে। ৩৬ বছরের অভিককে বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমাদের দিশাহীন তরুণ সমাজ উদাহরণ হিসেবে নিতে পারে অভিককে। আজকাল পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে মোটর সাইকেল বা গাড়ি নিয়ে রেসের নামে অযথা গতির ঝড় তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় জীবন হারাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। এটা কোনোভাবেই কাম্য না।

অভিক কখনো ঢাকার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে গতির প্রতিযোগিতায় নামেননি। কারণ সড়ক-মহাসড়ক গতির প্রতিযোগিতা তোলার স্থান নয়। তাছাড়া অতিগতির যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। অভিক নিজেই জানিয়েছেন, ‘ঢাকায় আমি গাড়ি চালাই না। ড্রাইভার চালান। আর রাস্তাঘাটে রেসিং করা ঠিক নয়।’

বর্তমানে কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ যুবাদের বিশাল অংশ সময় নষ্ট করছে মোবাইল আর ফেসবুকে। অভিক নিজেও ইউটিউবসহ নিজের ফেসবুক পেজে গাড়ির রিভিউ দেন। কিন্তু সেটা কাজের স্বার্থে। কাজের সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখেন মোবাইল আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। তার ভাষায়, ‘সাফল্যের জন্য গভীর মনোযোগের প্রয়োজন। কার রেসিংয়ে রিফ্লেক্স খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ অভিক গাড়ির রিভিউয়ার হিসেবেও অনেক জনপ্রিয়। 

তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইতে ৫০ বছর বয়সী মাদ্রাজ মোটর রেস ট্র্যাকে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের জাতীয় পর্যায়ের মোটর রেসের কোনো টুর্নামেন্টে তৃতীয় স্থান অর্জনের কৃতিত্ব দেখান অভিক।

মোটর রেসিং অনেক ব্যয়বহুল। তাই যারা মোটর রেসিং করতে আগ্রহী তাদের জন্য অভিকের পরামর্শ হচ্ছে- প্রথম প্রথম সিমুলেটরে রেসিং প্র্যাকটিস করা। তিনি নিজেও এখনো সিমুলেটরে রেসিং প্র্যাকটিস করে থাকেন। সিমুলেটরে রেসিং প্র্যাকটিস হচ্ছে প্রথম ধাপ। এরপর গো কার্টিং। তারপর রেস ট্র্যাকের পর চ্যাম্পিয়নশিপ।

অভিকের জীবন থেকে সবার জন্য জরুরি একটা শিক্ষা নেওয়ার আছে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজের জন্য অভিকরা উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা। আসলে যে কোনো শখকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। সেই জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা, চেষ্টা আর পরিশ্রম। অভিকের সাফল্য যার বড় প্রমাণ। আর অভিকের চাওয়া, গতি আর রোমাঞ্চের খেলা মোটর রেসের বিশ্বমানচিত্রে বারবার আসুক বাংলাদেশের নাম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //