ধর্ষণের অভিযোগের পর এসআই প্রত্যাহার

যশোরের শার্শায় ঘুষ না পেয়ে এক আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নির্যাতিতা নারী। তবে এজাহারে অভিযুক্ত এসআইয়ের পরিবর্তে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশের কথিত তিন সোর্সকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন শার্শার চটকাপোতা গ্রামের কামরুল ইসলাম (৪০), লক্ষ্মণপুর গ্রামের ওমর আলী (৫০) ও আবদুল লতিফ (৪৮)।

মামলায় নাম না থাকার পরও কেন এসআই খায়রুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘যেহেতু ওই ঘটনায় তার নাম এসেছে, এজন্য তিনি সেখানে কাজ করতে স্বস্তিবোধ করছে না বলে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমানের ভাষ্য, ‘ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে এসআই খায়রুলসহ ওই তিনজনকে তাঁর সামনে হাজির করা হয়। ওই সময় তিনি এসআই খায়রুল ছাড়া অন্য তিনজনকে শনাক্ত করেন। এসআই খায়রুলকে শনাক্ত না করায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্যাতিতার বোন ফোনে বলেন, ‘আমরা এখনো থানায় আছি। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলেছে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোন রেখে দেন।

এদিকে বুধবার দুপুরে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই সময় যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ অন্য কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।

পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। পুলিশ সদস্য বলে তদন্তে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, উপজেলার লক্ষ্মণপুরের বাসিন্দা ওই নারী মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, ৯ দিন আগে স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খাইরুল তাঁর স্বামীকে রাত ১১টার দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আটক করে নিয়ে যান। সকালে তিনি জানতে পারেন তার স্বামীকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটকের মামলার দেওয়া হয়েছে।

ওই ভুক্তভোগী বলেন, এরপর সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এসআই খায়রুলসহ চার ব্যক্তি তার বাড়িতে এসে ডেকে দরজা খুলতে বলেন। তিনি খায়রুলের সঙ্গে তার গ্রামের দুই ব্যক্তিকে দেখে দরজা খোলেন।

ওই নারীর দাবি, তিনি দরজা খুললে এসআই খায়রুল কামরুল নামে এক ব্যক্তিসহ ঘরে ঢোকেন। খায়রুল তাঁকে বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে তাঁর স্বামীকে ৫৪ ধারায় আটকের চার্জশিট দেওয়া হবে। তিনি ৫৪ ধারা কী জানতে চান। ওই সময় এসআই খায়রুল বলেন, এই ধারায় তার স্বামী সহজে জামিন পাবেন।

তিনি অভিযোগ করেন, টাকা দিতে না চাইলে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে খায়রুল অপর ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন- ‘ধর’। এরপর ওই দুইজন তাঁকে ধর্ষণ করে।

ওই সময় লক্ষ্মণপুর গ্রামের আবদুল লতিফ ও আবদুল কাদের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেও জানান ওই নারী।

মঙ্গলবার সকালে ওই নারী যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এসে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কোনো পুলিশ না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করলেও বারবার একই অনুরোধ করতে থাকেন তিনি।

হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ জানান, এক পর্যায়ে তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে তিনি হাসপাতালে এসে ওই নারীকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //