পুঠিয়ার ওসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই ওসিকে কেন চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না ও ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।  

আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত।

রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

স্বরাষ্ট্র সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি), রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) ও পুঠিয়া থানার ওসি শাকিল উদ্দিন আহম্মেদসহ ৭ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগ শোনার পর আদালত বলেন, এই যদি দেশের অবস্থা হয়, তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? 

আইনজীবী আদালতকে জানান, গত ২৪ এপ্রিল পুঠিয়া সড়ক পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে নুরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান পটল সাধরণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে পটলকে সাধরণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই ফলাফল বাতিল চেয়ে নুরুল ইসলামসহ তিনজন রাজশাহী আদালতে মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, নুরুল ইসলাম ৬০২ ভোট ও পটল ৫২০ ভোট পান। কিন্তু এই ফল পাল্টে পটলকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই মামলার বিরোধের জের ধরে গত ১০ জুন নিখোজ হন নুরুল ইসলাম। পরদিন ১১ জুন সকালে পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিক ফিল্ড’ নামক ইটভাটা থেকে নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় এজাহার দাখিল করেন। ওই এজাহারে পুঠিয়া সড়ক পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার সঙ্গে ওসি শাকিল উদ্দিনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়।

এটা দেখার পর নিগার সুলতানা এজাহার গ্রহণ না করে ওসির সম্পৃক্ততার কথা বাদ দিয়ে থানা থেকে এজাহার সংশোধন করতে বলা হয়। থানার কথা মতো নিগার সুলতানা ওসির নাম বাদ দিয়ে মূল হত্যাকারী হিসেবে আব্দুর রহমান পটলসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দাখিল করেন। থানা সেই এজাহার রেখে দেয়। পরে ওই রাতে নিগার সুলতানাকে থানায় ডেকে নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে দেয়। এরপর কয়েকদিন থানা থেকে কোনো তৎপরতা না দেখে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম পুঠিয়া উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এই মামলায় আব্দুর রহমান পটলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই সময় পুঠিয়া থানা থেকে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর করা একটি এজাহার হাজির করে থানা পুলিশ। তাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি দেখানো হয়। ওই এজাহারে সন্দেহজনক হিসেবে ৫ জনের নাম বলা হয়।

এই এজাহারের বিষয়ে তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়। পরবর্তীতে নিহত নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

এদিকে গত ১৮ জুন রাজশাহীর এসপি এক সংবাদ সম্মেলন করে নিহত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ আনেন। এসপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নুরুল ইসলামের সমকামিতার অভ্যাস ছিল। এলাকার এক কিশোরকে তিনি (নুরুল ইসলাম) এ কাজে বাধ্য করতেন। ১০ জুন রাতেও নুরুল ইসলাম ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ওই কিশোর তাকে ইটের আঘাতে হত্যা করে। তাই ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।'

এসপির এই সংবাদ সম্মেলনের কথা আজ হাইকোর্টে তুলে ধরেন আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //