কয়লা পরিবহনে আইন মানছে না পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি মেগা প্রকল্প পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। 

এ দুই কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি-পরিবহনের ক্ষেত্রে আইন-নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের আরেকটি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সমুদ্রপথে কয়লা পরিবহনের সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে (বিএসসি) দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বিদেশি শিপিং কোম্পানিকে কয়লা পরিবহনের কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) সম্পন্ন করেছে পায়রা ও রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দুই সংস্থা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) ও বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)। এখন ওই কার্যাদেশ বাতিল করে শিপিং করপোরেশনকে কার্যাদেশ দিতে হলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে বলে দাবি তাদের। 

গত জানুয়ারিতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন আইন-২০১৭ ও বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন-২০১৯ অনুযায়ী, সরকারি তহবিলের অর্থে সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিপিং সংস্থা হিসেবে বিএসসির মাধ্যমে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

এ আইন অনুযায়ী, পায়রা ও রামপালসহ অন্য যারা কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করবে, তাদের পণ্য শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ বা কর্পোরেশনের ভাড়াকৃত জাহাজে পরিবহন করতে হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। 

ওই চিঠিতে বলা হয়, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পরিবহনের দায়িত্ব বিএসসিকে দেয়ার জন্য ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর নৌপরিবহনমন্ত্রী একটি ডিওপত্র বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোম্পানি দুটি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদেশ থেকে বাংলাদেশে কয়লা পরিবহনের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাহাজ চার্টারিং বা ভাড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি বিদ্যমান আইন, বিধি ও সরকারি নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারি তহবিলের অর্থে সমদ্রপথে পরিবাহিত পণ্য বিএসসির মাধ্যমে পরিবহন করা না হলে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজের অনুকূলে বিএসসি কর্তৃক অনাপত্তি পত্র প্রদান করারও কোনো আইনগত সুযোগ নেই। ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা হিসেবে বিএসসি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের পণ্য পরিবহনেও আইনগত জটিলতা তৈরি হবে। 

চিঠিতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি সব দফতর-সংস্থাকে আমদানি-রফতানি পণ্য বিএসসির নিজস্ব জাহাজ অথবা বিএসসির ভাড়া করা জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি লিখিত নির্দেশনা জারি করেছিলেন। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যে উপায়ে কয়লা আমদানি করতে যাচ্ছে তা ওই নির্দেশনারও লঙ্ঘন। 

বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘এমন আইন ও বিধি সম্পর্কে আমরা আগে জানতাম না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের আগে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। পায়রায় আমদানিতব্য কয়লা পরিবহনে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশ সম্পন্ন করা হয়েছে ২০১৮ সালে। এখন ওই কার্যাদেশ বাতিল করতে হলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে। সেটি বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। তবে সরকার যে নির্দেশনা দেবে আমরা তা অনুসরণ করব।’

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাগেরহাটের রামপালে ও পটুয়াখালীর পায়রায় দুটি কেন্দ্রে বছরে ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এতে বছরে প্রায় সোয়া এক কোটি টন কয়লা প্রয়োজন হবে। কয়লা পরিবহনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হয়। সেই দক্ষতা ও প্রস্তুতি শিপিং কর্পোরেশনের নেই। আর তারা যদি ভাড়া করেই জাহাজ দেয় সেটিও অপেক্ষাকৃত বেশি খরচের পথ তৈরি করবে। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //