করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নের শঙ্কা

দেশে মহামারি করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

এখন নমুনা সংগ্রহ কমলেও বেড়েছে আক্রান্তের হার। থেমে নেই মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। এর মধ্যে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা ঘটছে। 

রাজধানীতে যানজট, গাড়ির সারি, লাল-সবুজ আর হলুদ বাতির ফের অপেক্ষা, বাজারে ভিড়, ব্যস্ত জীবন। নেই শারীরিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহারও হাতে গোনা। এমন দৃশ্যে স্বস্তির কারণ নেই, আড়ালে ঠিকই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের হার আর মৃত্যুর সংখ্যা। 

সংক্রমণ রোধে শুরুতে বড় পরিসরে জোনভিত্তিক লকডাউনের কথা বলা হলেও, তা বাস্তবায়ন হয়নি। এলাকা ভিত্তিক লকডাউনও সিদ্ধান্তগ্রহণেই থমকে গেছে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। 

তবে ধাপে ধাপে খুলেছে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়। চালু হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর গণপরিবহন। বিশ্বের বেশীরভাগ দেশ যখন করোনা নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিপদের শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।

করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসলে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। উর্ধ্বমুখী করোনা পরিসংখ্যানের সাথে, স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশাও চিন্তার ভাঁজ বাড়াচ্ছে। তাই এখনই কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। 

এদিকে দেশে করোনা বিস্তার রোধে সরকারি বিধিনিষেধ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে সোমবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ওই প্রজ্ঞাপনে বাড়ির বাইরে বের হলে মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এছাড়া রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে জরুরি প্রয়োজন বলতে বোঝানো হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিংবা ওষুধ কেনা, কর্মস্থল, জরুরি পরিষেবার চলাচল, চিকিৎসা সেবা এবং মৃতদেহ দাফন-সৎকারের কাজে যাতায়াত।

প্রতিটি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা গেলেও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

তবে ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী ও গর্ভবতী নারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিং মলগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রবেশমুখে সবার তাপমাত্রা পরিমাপের পাশাপাশি হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখতে।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি শপিংমলে আসা যানবাহনগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গণপরিবহনগুলো ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না। সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না।

তবে দেশে এ ধরণের বিধিনিষেধগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ এখন আর তেমনটা দেখা যায়না।

এ কারণে এই বিধিনিষেধগুলো মানতে জন সম্পৃক্ততা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, যদি জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে কাগজে কলমে এসব নিয়ম জারির কোনো মানে নেই।

বিধি-নিষেধ জারি করলেও সেগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, যদি জেলা উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের মধ্যে যদি দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়, তাহলে ছোট বড় প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, যদি সমন্বিত ব্যবস্থা না হয় তাহলে এগুলো কথার কথাই থাকবে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সহায়ক হবে না। কারণ নীতি নির্ধারকদের ওপরই নির্ভর করবে জনগণ মানবে কি মানবে না।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার শুরুতে জন সচেতনতা দেখা গেলেও এখন তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তার উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এবারে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশেষত ঈদের আগে গণপরিবহনগুলোয় কোনো স দূরত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ভ্রমণ করেছে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে জন সচেতনতার ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র আয়েশা আক্তার।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গত রোজার ঈদে মানুষ চলাচলের কারণে কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। এবারও মানুষ যেভাবে চলাচল করেছে, এই সংখ্যা আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এজন্য বিধিনিষেধের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি জন সচেতনতারও প্রয়োজন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঈদ পরবর্তী সময়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে এই বিধিনিষেধ জোরদার করা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।

সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেল জরিমানার কথা বলা হলেও এই আইন সবার ওপরে বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের ওপরে প্রয়োগ করা কঠিন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এই ভাইরাসটা নতুন। অনেকেই এ বিষয়ে পুরোপুরি জানে না। এজন্য আমরা আইন প্রয়োগের চাইতে আগে তাদের সচেতন করার ওপরেই বেশি জোর দিচ্ছি। যদি বার বার বোঝানোর পরও না মানে তাহলে আইন প্রয়োগ করা হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর উদ্যোগ না নিলে, বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতার তালিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হবার আশঙ্কা থাকবে বাংলাদেশের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //