বাংলাদেশ
মাসুদুর রহমান
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৪ এএম
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৫ এএম
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৪ এএম
বাংলাদেশ
মাসুদুর রহমান
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৫ এএম
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেপালকে ৫০ হাজার টন ইউরিয়া সার দিয়ে সহায়তা করবে বাংলাদেশ।
সারের অভাবে চরম সংকটে পড়েছে নেপাল। কৃষকরা ফসল বুনতে পারছেন না। ইউরোপ থেকে সার আমদানির চেষ্টা করেছে। নেপালের আয়ের বড় অংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে পর্যটন শিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। দেশটিতে আসন্ন ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গত ১ সেপ্টেম্বর কে পি শর্মা অলি শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান। বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিড কানেকটিভিটি, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রভৃতি বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নেপালের ট্রানজিট সুবিধা আরো উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
পর্যটনের অবস্থা এবার খারাপ হওয়ায় কৃষির ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে নেপাল। সারের অভাব মেটাতে বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে তারা। বাংলাদেশ সার রফতানি করে না। তাই নেপালকে সার দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কোনো উপায় না দেখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি নিজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পরও দেশটিতে সাহায্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ।
এছাড়া নেপালকে মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগও দেয়া আছে আগে থেকেই। বাংলাদেশের রোহনপুর ও ভারতের সিঙ্গাবাদ দিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল রেললাইন চালু হয়েছে। দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার অংশ হিসেবে নেপালের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য।
নেপালের ভৌগোলিক অবস্থানে ভারত ও চীন উভয় দেশের সীমান্ত রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে ভারতের সাথে নেপালের বরাবরই নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের সময় নেপাল নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। ওই সময়ে মোদির সরকার ভগত সিং কোশিয়ারিকে নেপালে পাঠিয়ে দেশটি হিন্দু রাষ্ট্রের পরিচয় না রাখলেও সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যেন না লেখে সেটি চেয়েছে। ভারতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নেপালের জনগণ সব সময়ই সোচ্চার। এ কারণে ভারতের মিডিয়ায় নেপাল কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে নানা নসিহত দেয়ার ব্যাপারেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে অলি সরকার।
মে মাসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ধারচুলা থেকে চীন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন। নেপালের দাবি, ওই রাস্তা তাদের ভূখণ্ড দিয়ে গেছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করার পর ভারত যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে লিপুলেখ আর কালাপানি- এ দুটি অঞ্চল ভারতের অন্তর্ভুক্ত বলে দেখানো হয়েছিল। চলতি বছর নেপালও একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে; যেখানে কালাপানি ও লিপুলেখকে তাদের অংশ বলে দেখানো হয়। তারপরই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিবাদ আবারো সামনে এসেছে। কে পি শর্মা অলি অভিযোগ করেন, তাকে পদচ্যুত করতে দিল্লি ও কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসে ষড়যন্ত্র চলছে।
প্রত্যেকটি দেশ তার জাতীয় স্বার্থ সামনে রেখে কাজ করে। এক সময় মোদির সরকার নেপালে ট্রাক প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে দেশটিকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। সেই নেপাল এখন ভারতের পাশে নেই। গালওয়ান সীমান্তে চীন-ভারত লড়াইয়ে ভূরাজনীতি খুব সক্রিয়। এ সময় মোদির তথাকথিত ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে প্রতিবেশী অনেক দেশই মোদি সরকারের পাশে নেই। পাকিস্তান আগে থেকেই ভারতের শত্রু। নেপাল ও শ্রীলংকাও এখন ভারতের বিপক্ষে চলে গেছে।
ভারতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির মিডিয়ার মাধ্যমে বিরোধপূর্ণ দেশগুলো সম্পর্কে অপপ্রচার চালায়। এখন ভারতীয় মিডিয়া নেপালের বিরুদ্ধে বিরামহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে নেপালিদের মধ্যে ক্ষোভ আরো বাড়ছে। তারা মনে করছেন, নেপালের পররাষ্ট্রনীতি কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা নির্ধারণ করতে চাইছে ভারত। ভারত ইদানীং বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের বন্ধু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালাচ্ছে।
সীমান্ত নিয়ে বিরোধ সত্ত্বেও প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে নেপাল। তবে অলি সরকারের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের অপপ্রচারের কারণে তারা চীনের সাথে সম্পর্ক নিবিড় করেছে। সম্পর্কের এমন এক সমীকরণের মধ্যে অলি সরকারকে বিপাকে না ফেলে বাংলাদেশ সরকার তাকে সার দিয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই সহায়তার পেছনে সম্ভবত ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ নেই। তবে মোদি সরকারের সাথে অলি সরকারের যে সুসম্পর্ক নেই, এটিও নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অজানা নয়।
মোদি সরকার ইদানীং বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগী হয়েছে। যার উদ্দেশ্য- চীনের সাথে বিরোধে এই দুই দেশ যেন ভারতের পাশে থাকে। তবে প্রত্যেকটি দেশ তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পর্কের ধরন নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত ও চীন উভয় দেশই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দুই দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ যে স্থিতাবস্থা রয়েছে, সেটিই ধরে রাখতে চাইবে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh