করোনাভাইরাস: সর্বত্রই লোক দেখানো আড়ম্বর

করোনাভাইরাস সামনে এনেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতের আসল চেহারা। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে স্বাধীনতার এত বছর পরও কতটা দুর্বল অতিগুরুত্বপূর্ণ খাতটি। 

অথচ ‘আমরা করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ কিংবা ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী’- এমন বড় বড় রাজনৈতিক বুলি দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের কভিড-১৯ যাত্রা। সেই যাত্রায় অবশ্য পিছিয়েও নেই আমরা, তবে আক্রান্তের দিক দিয়ে- চীন, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, পাকিস্তান, সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে একেবারে ব্রিটেনকে ছুঁই ছুঁই! 

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অবশ্য সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনোকালেই ছিল না। প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়া, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু- এমন খবরের সাথে যেন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা। অনিয়ম-দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা তো রয়েছেই। অন্য দেশগুলো যখন লড়াই করে যাচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে; তখন সেই যুদ্ধ ফেলে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল দুর্নীতি সামলানো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য বিভাগেরই শক্তিশালী মহল জড়িত থাকায় এ যুদ্ধটাও বেশ কঠিন।

ভুল শুধু ভুল

শুরু থেকে কঠোরভাবে লকডাউন ঘোষণা ও আক্রান্তদের শনাক্ত করে সঠিকভাবে আইসোলেটেড রাখতে পারলে, আজকের বাংলাদেশের রূপ অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি, একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হয়নি আগাম প্রশিক্ষণ। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়েও রাজ্যের অনিয়ম। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গছিয়ে দেয় নিম্নমানের পণ্য। 

এছাড়া রোগী শনাক্তকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ ও চিকিৎসা- এই মূল বিষয়গুলোর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতা সত্ত্বেও নেয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। সবখানেই লোক দেখানো প্রস্তুতির ডামাডোল। বিদেশ থেকে আগতদের দেরিতে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হলেও ছিল না সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সমন্বয়। যথাসময়ে পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়নি তাদের। আবার যাদের আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং হয়নি ঠিকভাবে।

লকডাউন না দিয়ে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। ফলস্বরূপ লঞ্চে, বাসে গায়ে গা ঘেঁষে হাজার হাজার মানুষ গ্রামে ছোটে। মূলত তাদের মাধ্যমেই সারাদেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অথচ সংক্রমণ ঠেকাতে তখনই ঘোষণা করা উচিত ছিল- ‘স্টে হোম’। অর্থাৎ, যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’- সেই প্রবাদের মতোই পরবর্তীকালে মানুষের স্রোত ঠেকাতে বন্ধ করে দেয়া হয় গণপরিবহন। 

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ঘরবন্দি করা হয় সবাইকে। তবে ঘরে থাকতে বলা হলেও তারা খাবে কী, জীবন চলবে কী করে- এসব বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। কিছুদিন যেতেই দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার আরেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা, মহামারির মধ্যেই খুলে দেয়া হয় পোশাক কারখানাগুলো। চাকরি বাঁচাতে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দীর্ঘপথ হেঁটে কিংবা ছোট যানে চড়ে দলবেঁধে ঢাকায় ঢোকেন। এর পরই দেখা দেয় করোনাভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন)। 

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ দেয়াটাও ছিল নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আবার সাধারণ ছুটি বাড়ানো বা শিথিল- কোনো ক্ষেত্রেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট, এপিডেমিয়োলজিস্টদের মতামত নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এর মধ্যে আগস্টের শুরুতে খুলে দেয়া হয়েছে অফিস-আদালত। বলতে গেলে আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, লকডাউন বা রেড জোন- সব ক্ষেত্রেই এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব। 

বিদেশ থেকে আসা লোকজনকেও আগের মতো কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দেশে দীর্ঘমেয়াদি করোনাকালের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। 

লুকোচুরি গল্প

করোনাভাইরাস নিয়ে প্রথম দিকে সংবাদ সম্মেলন হতো, যেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। পরে সেটি সংক্ষিপ্ত করে চালু হয় সংবাদ বুলেটিন, বাদ দেয়া হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। শুধু তাই নয়, মজুদ টেস্ট কিটের সংখ্যার মতো একটা অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বাদ দেয়া হয় ব্রিফিং থেকে। সংকট মোকাবেলায় অবাধ তথ্যপ্রবাহই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অতিমারির এ সময়ে সঠিক তথ্য প্রচারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু এ রকম সময়েও তথ্য লুকানো ও স্বাধীন মতপ্রকাশ দমনের অভিযোগ উঠেছে। 

ত্রাণ বিতরণের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলায় সাইবার আইনে মামলা ও গ্রেফতারের অভিযোগও রয়েছে।

ওরা ওৎ পেতে রয়

ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বহু আগে থেকেই দেশ অন্য একটি ভাইরাসে আক্রান্ত, যার নাম দুর্নীতি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া এই ভাইরাসটি কভিড-১৯ এর চেয়েও ভয়ংকর। যার কোনো ‘ভ্যাকসিন’ আবিষ্কার হয়নি আজও। জীবনদায়ী চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাতেও ছাড় দেয়নি দুর্নীতিবাজরা! তাদের কোনো বিবেক নেই, নেই মানবতা। এমনকি টাকার জন্য ওরা রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বেচে দেয়। করোনাকালে রিজেন্ট বা জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানের করা দুর্নীতির সেই বীভৎস চিত্রই তার প্রমাণ।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতের বাজেট সাড়ে সাত ট্রিলিয়ন বা সাত লাখ কোটি ডলার। তবে এর সাত শতাংশই যায় দুর্নীতিবাজদের পেটে। তার মানে প্রতি বছর এ খাতে দুর্নীতি হয় ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। 

অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, কেনাকাটায় স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি দুই ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) অবশ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়েই প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির পরিমাণ ৪৫৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি ডলার। এখন সময়টা অস্বাভাবিক। এ মহাদুর্গতিকে বড় সুযোগ ধরে অবশ্য সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেটও।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি না এলে হয়তো স্বাস্থ্য খাতের এমন নগ্ন চেহারা অদেখাই থেকে যেত। দুর্নীতির বাসা এত গভীরে প্রবেশ করেছে যে, সবকিছুতেই কমিশন আর দুর্নীতি! কি না ঘটেছে- কমিশনের লোভে নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দামে মানহীন চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয় থেকে শুরু করে পরীক্ষা ছাড়াই নেগেটিভ সনদ দেয়া। আর এসব দেখভালের দায়িত্ব যারা পালন করেন, তারা তো দায় এড়াতে পারেন না।’ 

ফোড়নে টানাপড়েন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদফতরের মধ্যে চলে আসা টানাপড়েন উন্মোচিত হয় রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি ঘিরে। যে কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে সরে যেতে হয় অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে। সেই দায়িত্বে আসেন ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তবে চেয়ারে বসেই তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আগে করোনাভাইরাস থেকে তো বাঁচি, পরে দুর্নীতি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া যাবে।’ 

সংবাদমাধ্যমে তার এই বক্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়- মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া কেউ সংবাদমাধ্যমে কথা বলা যাবে না।

উল্টো যাত্রা

বিশ্বব্যাংক গত এপ্রিলে বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে শুধু কভিড-১৯ মোকাবেলায় পরীক্ষা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কন্টাক্ট ট্রেসিং ইত্যাদির জন্য। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও (এডিবি) একই পরিমাণ অর্থ অনুমোদন দিয়েছে ভাইরাসটি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় জরুরি ব্যবস্থা নিতে। যদিও এসব অর্থের কোনো প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান নয়। 

উল্টো সারাবিশ্ব যেখানে পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে শুধু কিটের ঘাটতি দেখিয়ে, কমিয়ে দেয়া হয়েছে নমুনা সংগ্রহ। ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হলেও, এখন তা সীমিত ১০ বা ১২ হাজারের মধ্যে। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া গাইডলাইনেরও সম্পূর্ণ বিপরীত। অথচ হাসপাতালে এখন যে কোনো চিকিৎসা নিতে গেলেই লাগে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ; কিন্তু সরকারিভাবে পরীক্ষা যেন সোনার হরিণ। ফলে বিনাচিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেকেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরামর্শক ডা. এম মোজাহেরুল হক বলেন, ‘শুরুতেই আমরা বিভিন্ন মুখ থেকে শুনলাম- বাংলাদেশ প্রস্তুত। অথচ দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানেই (আইইডিসিআর) কেবল পিসিআর মেশিনে কভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ ছিল। এখন আবার ফি ধরে দেয়া হয়েছে, এতে জনগণ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। দায়িত্বশীলদের সমন্বয়হীনতাও সবার নজরে পড়েছে।’

এমনিতেই যাবে চলে!

কভিড-১৯ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে সরকার তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও এখন পর্যন্ত সাফল্য খুবই কম। সবমিলিয়ে আক্রান্ত বা ভাইরাসটিতে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এরই মধ্যে আবার ভুতুড়ে পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। ল্যাবে নমুনা পৌঁছানোর আগেই আসছে ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট। ফলে প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষার মান নিয়ে, সঙ্গে আস্থাহীনতা। 

এরপরও সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেছে। মৃত্যুর হার কমে গেছে, সুস্থতা বেড়েছে। ভ্যাকসিন আসুক বা না আসুক কভিড-১৯ দেশ থেকে এমনিতেই চলে যাবে।’ 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের যথার্থতা কতটুকু- এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এমনিতে কীভাবে করোনা চলে যাবে, তা বুঝতে পারছি না। একমাত্র ভ্যাকসিন যদি আসে ও সবাইকে দিতে পারলে হয়তো সুরক্ষা হবে।’

দেশের কর্তাব্যক্তিরা যা-ই বলুন; হংকং, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করেছে, আমরা তার কিছুই পারিনি। পারিনি বলেই ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, সংক্রমণের সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫ নম্বরে, আর এশিয়ায় তৃতীয় ও দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার দিক থেকে সবার নিচে। ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৭৫৯ জনের এবং ভাইরাসটি শনাক্ত করা গেছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ জনের দেহে। তবে পরিসংখানের চেয়ে বাস্তব অবস্থা অনেক ভয়াবহ। হাজার হাজার মানুষ করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরলেও, পাচ্ছেন না সিরিয়াল। হাসপাতালে মিলছে না সঠিক সেবা। আইসিইউ খালি নেই। নেই ভেন্টিলেটর। অক্সিজেন সিলিন্ডারও অপ্রতুল। মোটের ওপর দেশে কভিড-১৯ চিকিৎসা পুরোপুরিই যেন ‘আল্লাহ-ভরসা’!

যদি আসে ফিরে আবার

চলন দেখে মনে হয়, মহামারি করোনাভাইরাস পথ হাঁটবে আরো বহুদূর। যেসব দেশ ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যেও রয়েছে দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসার ভয়। যাকে বলা হচ্ছে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ঢেউ। আমাদের দেশে সবে ‘ফার্স্ট ওয়েভ’ চলছে, কতদিন চলবে জানা নেই। যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত সেভাবে সমন্বয় হচ্ছে না। মানুষ জানে মাস্ক না পরলে সমস্যা হবে; কিন্তু তারা পরছে না। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করার চেষ্টাতেও ব্যর্থ সরকার। ভ্যাকসিন কূটনীতিতেও বেশ পিছিয়ে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেকেন্ড ওয়েভ এলে দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই বর্তমান অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে কতটুকু এগোতে পারবে, সেই প্রশ্নটি সামনে চলেই আসে।

এ প্রশ্নে বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, “অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নটির ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিতে পারছি না। প্রথমত, আমাদের হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম খুবই দুর্বল ও সেকেলে। তাই জানি না এ মুহূর্তে কভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। আবার জনগণকেও ভাইরাসটির ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা যায়নি এখনো। সামাজিক দূরত্বসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষ আমলেই আনছেন না। কভিড-১৯ শনাক্ত ও কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্যও দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ জনগণ হাসপাতালবিমুখ হয়ে গেছে। জরুরিভিত্তিতে তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। এক কথায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত এক ভয়াবহ ভঙ্গুর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দ্রুতই এর মেরামতের ব্যবস্থা না করলে জাতি হিসেবে কভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক যেকোনো সংক্রামক ব্যাধির মোকাবেলা করা অসম্ভব।”

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //