আজ স্বপ্ন ছোঁবে বাংলাদেশ

বসছে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান, একবিন্দুতে মিলিত হবে খরস্রোতা দুই পাড়ের মানুষ

স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে পদ্মা সেতু। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বসবে শেষ স্প্যানটি। দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের সেতুর পুরো অবকাঠামো। একবিন্দুতে মিলিত হবে খরস্রোতা পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের স্বপ্ন। একইসঙ্গে শত জল্পনা-কল্পনারও অবসান ঘটিয়ে স্বপ্ন ছোঁবে বাংলাদেশ।

পদ্মায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু গড়বে নতুন এক দিগন্ত। গতকাল ভাসমান বড় ক্রেনে স্প্যানটি উঠিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি স্থানে নিয়ে রাখা হয়। আজ সুবিধাজনক সময়ে স্প্যানটি স্থাপন করা হবে। আজ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসাতে প্রস্তুত প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যান বসাতে দুই দিন সময় নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী সেতুর শেষ স্প্যান আজ বসবে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বুধবার যেসব কাজ করার কথা ছিল তা কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। আজ কুয়াশা কম হলে স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে। তবে কুয়াশা বেশি থাকলে স্প্যানটি শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) বসানো হবে।

আজ শেষ স্প্যানটির বসানো হলে দৃশমান হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। 

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো হয়। ধীরে ধীরে সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষ সহজে ঢাকায় আসবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নিলে আটকাতে পারেনি পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসিকতা ঘোষণাটি আজ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে চারপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের উদ্যোগ চলছে। 

সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি ভাসমান ক্রেনে করে মাওয়ার কুমারভোগ এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে নিয়ে আসা হয়। গতকাল বুধবার বিকালে স্প্যানটি ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছয়টি ক্যাবলের (তার) মাধ্যমে ভাসমান ক্রেনের ওপর অবস্থান করছে। 

পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (সিএমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতু ও নদীশাসনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার উভয় তীরে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচসিএম। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা; অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : পদ্মা সেতু

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //