এখনই করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ৩২% মানুষ: গবেষণা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় থাকলেও দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ এখনই টিকা নিতে চান বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ।

গবেষণায় বলা হয়, দেশের মোট ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। তবে মনে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় থেকে তারা শুরুতেই টিকা না নিয়ে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা নিতে চান।

গত ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ গবেষণায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী তিন হাজার ৫৬০ জনের উত্তরদাতা এই গবেষণার অংশ নেন। দেশের আট বিভাগের ১৬টি উপজেলায় ও ঢাকার সিটি এলাকা থেকে উত্তরদাতাদের বেছে নেয়া হয়।

গবেষণা দলের প্রধান গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ এখনই টিকা নিতে আগ্রহী।

গবেষণার ফলের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, টিকা দেয়া শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ২২ ভাগ মানুষ নিতে চান, কয়েক মাস পর ২৭ ভাগ, এক বছরের পর ৩ ভাগ ও ১৬ ভাগ কখনোই এই টিকা নিতে চান না।

টিকা দেরিতে নেয়ার কারণ হিসেবে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন- টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহে ৫৪ ভাগ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ৩৪ ভাগ ও টিকার মান নিয়ে ১২ ভাগ মানুষ সন্দেহে প্রকাশ করেছে।

আর্থিক সক্ষমতাও টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, যাদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা, তাদের মধ্যে থেকে বিনামূল্যে দিলে ৮৮ ভাগ ও টিকা কিনে নিতে হলে ৫২ ভাগ টিকা নিতে রাজি। যাদের আয় ২০ হাজার- ৫০ হাজার টাকা তাদের ৮৩ শতাংশই এই টিকা বিনামূল্যে নিতে চান ও ৮০ শতাংশই এই টিকার জন্য অর্থ দিতে রাজি আছেন। আর যাদের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার উপরে তাদের মধ্যে ৯১ শতাংশ টাকা দিয়ে টিকার নিতে চান।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতাই টিকা নিতে আগ্রহী যদিও শহরাঞ্চলে এর পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ। ধর্মীয় দিক দিয়ে বৌদ্ধরা সবচেয়ে কম আগ্রহী (৬৬ শতাংশ), মুসলমানরা (৮২ শতাংশ), হিন্দু (৯৭ শতাংশ), খ্রিস্টান (১০০ শতাংশ) ও নাস্তিকদের (১০০ শতাংশ) টিকা নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার পুরুষদের (৮২ শতাংশ) তুলনায় মহিলারা (৮২ শতাংশ) এই টিকা নিতে বেশি আগ্রহী।

গবেষণায় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ও বরেণ্য ব্যক্তিদের টিকা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ও এতে করে টিকা নেয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, টিকা নিয়ে থাকা গুজব রুখতে সরকারকে টিকা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

গবেষণা দলটির অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউন শিমুল ও ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কভিড-১৯ টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ গত সোমবার ঢাকা এসে পৌঁছেছে। এর আগে ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। -ইউএনবি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //