দ্রুত ভ্যাকসিন দেয়ার বিকল্প নেই

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনকেও অকার্যকর করার ক্ষমতাসম্পন্ন করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে পাওয়াসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে কভিড-১৯ মোকাবেলা। 

ব্যাপকভিত্তিতে দ্রুততার সাথে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ছাড়া নতুন ভেরিয়েন্টের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অন্যদিকে, ভ্যাকসিন নিতে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের সাড়া খুব ধীরগতির। গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী মাত্র ৩০ হাজার ৩০০ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে; কিন্তু সরকারের কাছে রয়েছে ৭০ লাখ (৫০ লাখ কেনা এবং ২০ লাখ উপহার) ডোজ ভ্যাকসিন। 

এ মাসের শেষে দিকে অথবা মার্চের প্রথম দিকে আরো ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসবে বলে কথা রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে তিন কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন এসে পৌঁছাবে।

গণস্বাস্থ্যের আরএনএ মলিক্যুলার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় করা জিনোম সিকোয়েন্স থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের অস্তিত্ব থাকার কথা ঘোষণা দেয়া হয়। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যেসব মানুষের মধ্যে আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে, এখনই তাদের বসবাসকৃত আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভিত্তিতে ভ্যাকসিন দিতে না পারলে বিপদটি বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ঢাকায়

আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের রূপান্তরিত ভাইরাসটি ঢাকায় বসবাসকৃত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে। তারা কার সাতে মিশেছেন, কোথায় কোথায় গেছেন, তার কোনো তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই। ফলে এটি মনে করাই যেতে পারে- নতুন ভেরিয়েন্টের বিপদটি আমাদের সামনে ওত পেতে রয়েছে। এই ভেরিয়েন্টটি বিপজ্জনক হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এটি নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনকে প্রায় অকার্যকর করে দিচ্ছে। 

নোভাভ্যাক্স ভ্যাকসিনটি ৭০ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে; কিন্তু আফ্রিকান এই ভেরিয়েন্টটি নোভাভ্যাক্সের কার্যকারিতা ৫০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই ভেরিয়েন্টটি খুব দ্রুত ছড়ায় ও সাধারণ করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে এটি ভয়াবহ হতে পারে, যেখানে চিকিৎসা ও পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক কম। তাছাড়া বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। 

তবে গণস্বাস্থ্যের গবেষকরা কিছু আশার বাণীও শুনিয়েছেন- করোনাভাইরাস আক্রান্ত যে সব রোগী তাদের কাছে এসেছেন, করোনাভাইরাসের ব্যবস্থাপনা চিকিৎসায় তাদের সবাই সুস্থ আছেন। যারা এই ভেরিয়েন্টটিতে সংক্রমিত হয়েছেন, তারা কেউ বিদেশ যাননি। অর্থাৎ, এই ভাইরাসটি নিজের মধ্যে রূপান্তর করতে করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্টটিতে পৌঁছেছে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য ভাইরাস নিজের মধ্যে প্রতিনিয়ত রূপান্তর ঘটিয়ে থাকে। 

দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের এই ভাইরাসটি যেন বেশি ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য যাদের মধ্যে এটি পাওয়া গেছে ও তারা যাদের সাথে মিশেছেন, তাদের খুঁজে বের করে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন গণস্বাস্থ্যের গবেষকরা। 

রেজিস্ট্রেশনে সাড়া কম 

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে রেজিস্ট্রেশন করায় এ পর্যন্ত খুবই কম সাড়া পাওয়া গেছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা এসব ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে দেশের জেলা সদরগুলোতে পৌঁছে গেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনে সাড়া মিলেছে খুবই কম। সরকারের পক্ষ থেকে একটি অ্যাপ তৈরি করে গুগুল প্লে স্টোরে দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা এখনো হয়ে ওঠেনি। জানা গেছে, সরকার অ্যাপ তৈরি করেছে। অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন খুবই সহজ।

ইন্টারনেট রয়েছে এমন সব ধরনের মোবাইল থেকে খুব সহজেই ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব। তবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট রয়েছে, এমন মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে (www.surokkha.gov.bd) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) নম্বর দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ছাড়াও বিকল্প পথ

অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ছাড়াও বিকল্প পথে ভ্যাকসিন নেয়ার রেজিস্ট্রেশনের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে সরকারের উদ্যোগে ল্যাপটপ, ট্যাব দেয়া হয়েছে। সেখানে নানা ধরনের তথ্য জানা ও তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য প্রশিক্ষিত জনবলও দেয়া হয়েছে। উপজেলা সদর অথবা ইউনিয়নে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না, তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে সহায়তা দেয়া হবে। যেখানে ১০০ জন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসবে, তাদের ভ্যাকসিন নেয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় দেওয়া হবে সেখান থেকে। এভাবে এক ধরনের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন দানকেন্দ্রে গিয়েও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনই গেমচেঞ্জার!

জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন হতে পারে গেমচেঞ্জার। এই কোম্পানির ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের পর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ড. স্টেফেন ফাউসি জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি এক ডোজের ভ্যাকসিন। সাধারণ ফ্রিজারেই এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা যাবে। অন্যান্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের চেয়ে এটি হবে সাশ্রয়ী মূল্যের। উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মধ্যে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা যাবে ও এটি মানুষকে হাসপাতালে যেতে দেবে না ভ্যাকসিনটির খুব ভালো কার্যকারিতার জন্য। জনসনের এই ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’ 

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টই একমাত্র ভাইরাস, যা মানুষের শরীরে থাকা অ্যান্টিবডিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে মানুষকে আক্রান্ত করে। ভাইরাসটি খুবই সংক্রমক। জনসনের ভ্যাকসিনটি দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৫৭ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ও সাধারণ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর। জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানি তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি ডাবল ডোজ পরীক্ষা করে দেখবে তা কেমন কাজ করে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //