সরকারি চাপ ছিল না: বিদায়ী দুদক চেয়ারম্যান

দায়িত্ব পালনকালে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ ছিল না বলে দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

সোমবার (৮ মার্চ) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাকে কোনো মন্ত্রী বা এমপি কখনও চাপ প্রয়োগ করেননি। শুধু একদিন একজন মন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি আমার বন্ধু। তিনি এসেছিলেন এক কাপ চা খেতে, কোনো তদবির করতে আসেননি। আর কোনো মন্ত্রী আমার কাছে আসেননি। কোনো মন্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে এমন কিছু বলেননি। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না।

তিনি বলেন, একটি বিষয় স্বীকার করতে হয়, যখন আমার মনে হয়েছে যে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে আমি সরে এসেছি। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সবসময় আমার কাছে প্রথম ছিল। সেক্ষেত্রে নিজের ওপর নিজের চাপ ছিল।

তিনি বলেন, দুদকের নখ-দাঁত নেই- এটি অনেক পুরোনো ও প্রাচীন কথা। দুদক যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে দুদকের। আইনি ম্যান্ডেট রয়েছে। আমি মনে করি যতটুকুই আইন আছে, এ আইন দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। হয়তো আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করবেন যে আমরা চেষ্টা করেছি। এ চেষ্টার যদি কোনো ত্রুটি থাকে সে ত্রুটি আমার। 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতায় সব দুর্নীতি নেই। এটি আমরা হয়তো বুঝাতে পারিনি। এক কমিশনের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। পরবর্তী কমিশন এটিকে আরও বেগবান করবে।

আগের কমিশনের করা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৬টি মামলার তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি একটি পুরনো প্রশ্ন। এ প্রশ্ন আপনারা সবসময় করে থাকেন। এর উত্তরও আমি দিয়েছি। আমার মনে হয় একই উত্তর হবে। এটি চর্বিতচর্বণ। বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে ৫৬টি মামলা হয়েছে, আমার জানা মতে, আরও মামলা হবে। সমস্যা হচ্ছে যে, চার্জশিট হচ্ছে না কেন? তবে চার্জশিট কিংবা মামলা হবে কি না আমি বলতে পারি না, আপনিও বলতে পারেন না। প্রশ্নটা হবে রিপোর্ট হচ্ছে না কেন? সে রিপোর্ট একবার কমিশনে জমা হয়েছিল, আমরা গ্রহণ করতে পারিনি।

রিপোর্ট গ্রহণ না করার বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের নাম থাকলেও অর্থ কীভাবে আত্মসাৎ হয়েছে এবং সেই অর্থ কোথায় গেল তা উল্লেখ ছিল না। আমরা এ বিষয়টি এখনও ফলো করছি। কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অর্থ কোথায় গেল? তারা (তদন্ত কর্মকর্তা) অনেক লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে কি না জানি না।

তিনি বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে আমরা (দুদক) একেবারেই স্বাধীন নই। আমাদের উপরে মহামান্য আদালত রয়েছেন, সেখানে জবাবদিহি করতে হয়। প্রত্যেকটি রিপোর্ট সেখানে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। আমাদের কাজ হলো আদালতে প্রমাণ করা। আদালতে যদি প্রমাণই করতে না পারি, সে রিপোর্টের দায়িত্ব কতটুকু, আমি জানি না।

তিনি বলেন, কমিশন মানে আরও দুইজন কমিশনার আছেন। আপনাদের জানা দরকার, কোনো মামলা যখন তদন্ত হয় আপনি আইওর (তদন্ত কর্মকর্তা) সঙ্গে খবরদারি করতে পারবেন না। আইও যখন রিপোর্ট দেবে আমরা তা পর্যবেক্ষণ করি। আইও যদি নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট দিতে না পারেন তাহলে আমরা শোকজ করি। সময়মত রিপোর্ট দিতে বলি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, যদি আমরা জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারতাম তাহলে এ কমিশনের আর প্রয়োজন ছিল না। এটি কখনই কোনো দেশে সম্ভব নয়। মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনো শেষ নেই। জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য পরের কমিশন, তারপরের কমিশন, এরপরের কমিশন, পরে একটা অবস্থায় যাবে।

গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কমিশনের গঠনমূলক সমালোচনা করতে আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ সমালোচনা আমি চলে যাওয়ার পরেও করবেন। কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের যা করার করবেন। ব্যক্তিগতভাবে যদি কিছু করে থাকি সেটারও সমালোচনা করবেন। এটা আমরা নিতে রাজি আছি। কমিশনের সফলতা যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে জনগণ, সুশীল সমাজ, এনজিও সবাই বিচার করবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //