২০২৪ সালের মধ্যে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইতি

আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ভাড়াভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় অতি দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনায় তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১৬ বছর মেয়াদি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ওই কেন্দ্রগুলো স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপিতে অতিরিক্ত বিদ্যুতের অবদান প্রায় ২৩ হাজার ২১২ কোটি থেকে এক লাখ ২১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা না গেলে খাতভিত্তিক উৎপাদন, দেশজ উৎপাদন ও রফতানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতো। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচক এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সংক্রান্ত খাতভিত্তিক সূচকে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারতো।

সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হলে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেয়াদপূর্তিতে অবসরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে এক হাজার ১০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অবসরে যাবে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ৬টি রেন্টাল এবং ৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৩৯৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সব মিলে মেয়াদোত্তীর্ণ ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ক্ষমতা ৮৩৩ মেগাওয়াট।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে অবসর প্রদান করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এইএফওভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। তবে সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা এবং মূল্য কম হওয়ায় কিছু কিছু গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ প্রয়োজন অনুযায়ী ‘ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি রেন্টাল ও দুটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসভিত্তিক এবং এর উৎপাদন ক্ষমতা ২৪৫ মেগাওয়াট।

বর্তমানে ১৬টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৫২ মেগাওয়াট এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৯টির উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫৭ মেগাওয়াট।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার ব্যাপারে আলোচনা হয়। সেই অনুসারে কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে মেয়াদ বৃদ্ধি না করে দ্রুততম সময়ে অবসরে পাঠানোর ব্যাপারে কমিটি সুপারিশ করেছে।

কমিটি থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আবু জাহির, এস, এম, জগলুল হায়দার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর ও বেগম নার্গিস রহমান অংশগ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //