দুরারোগ্যব্যাধি আক্রান্তদের ভ্যাকসিন নেয়ার তাগিদ

দেশ জুড়ে প্রথম ধাপের করোনা ভ্যাকসিন নেয়া শুরু হয়েছে। করোনায় আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগসহ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা। সংক্রমণমুক্ত হওয়ার পর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সময় বেশি লাগছে। এ অবস্থায় ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগীরা টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, টিকা কোন ভয় বা আতঙ্কের বিষয় নয়। এটা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ। এত অল্প সময়ে করোনার টিকা আবিষ্কার বিজ্ঞানের এক অসাধারণ অবদান। আমাদের কৃতজ্ঞচিত্তে এটি গ্রহণ করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন রোগীদের প্রায় ৪৬ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর ডায়াবেটিস নেই, এমন ব্যক্তিরা গড়ে ৮-৯ দিন চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের কারো কারো ১৫ থেকে ১৭ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পরও সুস্থ জীবনে ফিরতে দেরি হচ্ছে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের। তাদের ততটা দ্রুত হচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বেশি সময় লাগছে। আগের মতো কাজ করতে পারছে না। তাদের টিকা নেয়া সবার আগে দরকার।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানও মনে করেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের আগে টিকা নেয়া দরকার। যার ডায়াবেটিস নাই, তার করোনাভাইরাস হলে যতটা মারাত্মক হবে, যার ডায়াবেটিস আছে, তার করোনাভাইরাস হলে ঝুঁকি অনেক বেশি। সে জন্য ডায়াবেটিস রোগীর তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া উচিত।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসা বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা যাদের আছে, তাদের শারীরিক ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের আগে টিকা দিতে হবে। তারা আক্রান্ত হলে দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। কাজেই ঝুঁকি এড়াতে টিকা নিয়ে নেয়া প্রয়োজন। টিকা দেয়ার সময়ও তাদের প্রায়োরিটি দিতে হবে। তারা যেন আগে টিকাটা পায়। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের টিকা নিতে হলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। যাদের ব্লাড সুগার বেশি আছে তাদের সুগার কমিয়ে টিকা নিতে প্রস্তুত হতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডা. এস এম মোস্তফা জামানর বলেন, করোনার টিকা সবাই নিতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদী রোগে যারা ভুগছেন যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, হার্টে রিং পরেছেন বা বাইপাস করেছেন তারাও নিতে পারবেন। অ্যাজমা রোগী টিকা নিতে পারবেন, এমনকি ক্যানসার রোগী যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন কিন্তু স্বাভাবিক আছেন তারাও নিতে পারবেন। এসব রোগ থাকার পরও একজন রোগী যদি স্থিতিশীল থাকে তাহলে তার টিকা নিতে বাধা নেই।

ল্যাবএইডের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ডা. মাহবুবর রহমান বলেন, আমাকে অনেকে ম্যাসেঞ্জার- হোয়াটস আপ এ ম্যাসেজ পাঠান, ফোন করে জানতে চান যারা হৃদরোগসহ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, এ্যালার্জি ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তারা করোনা প্রতিরোধী টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন কিনা। আবার যারা হার্টে স্টেন্ট বা রিং পরিয়েছেন, ওপেনহার্ট সার্জারি করিয়েছেন তারাও ভ্যাকসিন নিতে পারবেন কিনা, ভ্যাকসিন নেয়ার আগে কোনো ওষুধ বন্ধ করতে হবে কিনা- জানতে চেয়েছেন। তাদের প্রশ্নের জবাবে বলব, হ্যাঁ, টিকা নিতে পারবেন। শুধু পারবেন নয়, নিতে হবে, অবশ্যই নিবেন। বয়স ১৮ বৎসরের বেশি যে কেউ টিকা নিতে পারবেন। শুধু যারা কোন হঠাৎ চলমান রোগে যেমন- জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, নতুন হার্ট অ্যাটাক, একিউট কিডনি ফেইল্যুর, একিউট লিভার ফেইল্যুর, নতুন ব্রেন স্ট্রোক, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিতে ভুগছেন তারা আপাতত টিকা নিবেন না। তবে এর ধাক্কা কেটে গেলে টিকা নিয়ে নিবেন। এমনকি গর্ভবতী মাও টিকা নিতে পারবেন। যদি টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার সময় খারাপ ধরনের এ্যালার্জি হয় তাহলে তিনি টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিবেন না। যারা হার্টে রিং পরিয়েছেন বা বাইপাস সার্জারি করিয়েছেন তাদের বরং টিকা নেয়াটা জরুরি। কোনো ওষুধ বন্ধ না করেই টিকা নিবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //