সুবিধাবাদীরা রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন: রাষ্ট্রপতি

কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছে অভিযোগ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড় — এটাই রাজনীতির মূল আদর্শ। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন।’

বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনের আয়োজন ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জোতির্ময়’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, পেশা হলো- নিজের ও পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য উপার্জন। আর রাজনীতি হলো- দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার ক্ষেত্র। রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাই- আসুন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করি।’

এ সময় রাষ্ট্রপতি জাতির পিতার স্মৃতি সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্ম যেন সেটা জেনে নিজেদের আলোকিত করতে পারে এবং দেশ গড়ায় তা কাজে লাগাতে পারে।

তিনি বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষের জন্য এটি স্মরণীয় ঘটনা। এ কর্মসূচি খুবই সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, পৃথিবীকে আলোকিত করতে প্রতিদিনই সূর্য ওঠে। বাঙালিকে আলোকিত করতে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একটি সূর্য উদিত হয়েছিল। যার আলোর প্রখরতায় আমরা একটি পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পেয়েছি। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এনে দিয়েছেন আত্মপরিচয়; বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো ধাতুমন্ত্র দিয়ে ইতিহাসে ঠাঁই পাননি। নিজের কর্ম ও জীবন দিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু চাইলে ভোগ বিলাসে মত্ত থাকতে পারতেন। কিন্তু তা প্রত্যাখান করে বাঙলা ও বাঙালির স্বপ্নকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ইয়াহিয়ার ধারণা ছিল- বঙ্গবন্ধু প্রাণের ভয়ে তার কাছে ছোট হয়ে যাবে। এজন্য হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অথচ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘দুঃখিত। ওই হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ওই হাত আমি স্পর্শ করতে পারব না।’ নিজের ও পরিবারের চেয়ে দেশকে অধিক ভালোবাসলে মুক্তির গান গাওয়া যায়। জাতির পিতার এ অসীম সাহসিকতা মর্যাদায় সমুন্নত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্পন্নোত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত। পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প এখন শেষের পথে। এভাবে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ।

রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর হবে। এ সময় তিনি সব দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এর আগে বিকেল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর মুজিব শতবর্ষের থিম সং উপস্থাপনা করা হয়। এটি লিখেছেন কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও সূর করেছেন নকিব খান। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আকর্ষণীয় ফ্লাইফাস্টের রেকর্ড ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। দেশের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান আর মনোজ্ঞ উপস্থাপনা মুগ্ধ করে আমন্ত্রিত অতিথিদের।

বাঙালির ইতিহাসের অনন্য এ উদযাপনের মুহূর্তে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফাজনা আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো, জাপানের জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ও বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //