আন্তর্জাতিক বন দিবস আজ

সংরক্ষিত বনভূমির ৫৪ শতাংশই বেদখল

আজ ২১ মার্চ (রবিবার) আন্তর্জাতিক বন দিবস। বন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বন পুনরুদ্ধার: উত্তরণ ও কল্যাণের পথ’।

২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ২১ মার্চকে বন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের নেয়া পদক্ষেপে দেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ এখন মোট আয়তনের ২২.৩৭ শতাংশ। যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫.৫৮ শতাংশ। এর মধ্যে বন অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর, যা দেশের আয়তনের প্রায় ১০.৭৪ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২৪ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ১,৩৮,৬১৩ একর জবরদখল হয়ে গেছে। মোট বেদখল জমির প্রায় ৫৪ শতাংশই সংরক্ষিত বনের। অবৈধ জবরদখল উচ্ছেদের মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধার ও তা সংরক্ষণে সরকার কাজ করছে।


ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষিভূমি সম্প্রসারণ, আবাসন প্রভৃতি নানা কারণে সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। ফলে দেশের বন ও বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখীন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যমান বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করেছে। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও বনের প্রতিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ শুরু করেছিলেন। দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণ, উপকূল সংরক্ষণে বনায়ন, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী ও অন্যান্য জলাভূমি সংরক্ষণ, ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠাসহ প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগী কর্মকাণ্ড দৃষ্টান্তমূলক ও প্রশংসার দাবিদার। 

বঙ্গবন্ধুর এমন উদ্যোগ স্মরণীয় করে রাখতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনগণের মাঝে বিনামূল্যে ১ কোটি চারা বিতরণ করা হয়েছে।


বর্তমান সরকার সুন্দরবন সংরক্ষণে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সুন্দরবনের বৃক্ষ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত জাতীয় বন জরিপের তথ্যমতে, সুন্দরবনে মোট কার্বন মজুদের পরিমাণ ১৩৯ মিলিয়ন টন, যেখানে ২০০৯ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ মিলিয়ন টন। এছাড়া বন সেক্টরে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সামিল হয়েছে বাংলাদেশ। স্মার্ট পেট্রলিং এর আওতায় জিপিএস এর পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহারের কার্যক্রমও ইতিমধ্যেই হাতে নেয়া হয়েছে।

এদিকে বনের জমি পুনরুদ্ধার নিয়ে যতগুলো মামলার রায় হয়েছে, তার ২৪ শতাংশে হেরেছে বন বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি চারটি মামলার একটিতে হেরেছে বন বিভাগ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেয়া বন বিভাগের এক প্রতিবেদনেই এ চিত্র উঠে এসেছে। 

বন বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বনের জমি নিয়ে ২ হাজার ৯৪৭টি মামলা চলছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত রায় হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৩৬টিতে। বন বিভাগ হেরেছে ৫৫৭টি মামলায়। আর জয়ী হয়েছে এক হাজার ৭৭৯টিতে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বন বিভাগ হারতে চায় বলেই বনের জমির মামলায় হেরে যায়। এর পেছনে দুর্নীতি ও যোগসাজশ রয়েছে। সরকার জিততে চেয়েছে, কিন্তু হেরে গেছে, এমন মামলার নজির খুব কম।’


উল্লেখ্য, বন আইন হয়েছে ব্রিটিশ আমলে ১৯২৭ সালে। ৯৩ বছরের পুরনো এ আইনেই চলছে বন বিভাগ। এ আইনে নেই বনের সংজ্ঞা, বনের ধরন ও বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। গেজেট প্রজ্ঞাপনে সংরক্ষিত বনের মর্যাদা রহিতকরণের সুযোগ রাখা হলেও বন অধিদফতরের পূর্বানুমতি গ্রহণ এবং কী প্রক্রিয়ায় রহিত করা হবে, তা আইনে বলা নেই। এর ফলে ঢালাওভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বনভূমি।

বন বিভাগের ওয়েবসাইটে বন আইন ২০১৯ (খসড়া) নামে একটি আইনের খসড়া রয়েছে। সেখানে কয়েকটি ধারা সংযোজন ছাড়া খসড়া বন আইনের সাথে বন আইন ১৯২৭-এর কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //