করোনার টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত হলেও ঝুঁকি কম : গবেষণা

করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলেও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম বলে এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) এক গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা নেয়ার পর আক্রান্তদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়নি। 

টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাদের মধ্যে কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিলক্ষিত হয়নি।

টিকা নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়া ২০০ রোগীর ওপর চালানো গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশের বেশি রোগীর শ্বাসকষ্ট ছিল না। ৯২ শতাংশ রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়নি। বয়স্ক ও কো-মরবিডিটির কারণে কিছুসংখ্যক রোগীর শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়েছে। টিকার প্রথম ডোজ নেয়া পর আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজন রোগীর।

গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের অধিকাংশ টিকা নেয়ার অন্তত ৩২ দিন পর আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের শরীরের গড় তাপমাত্রা ছিল ১০১ ডিগ্রি। লিঙ্গ ও বয়সভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৯৯ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি।

সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেয়া করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করা একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষক দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়। যাদের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়, তারা ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছিলেন।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। এই শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু ঘটে। তবে এই গবেষণায় দেখা যায়, করোনা টিকা নেয়াদের মধ্যে ১৭৭ জনের কোনো শ্বাসকষ্ট পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বয়সের তারতম্য, বার্ধক্যজনিত কারণ ও বিভিন্ন কো-মরবিডিটির কারণে মাত্র ৮ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্ট ও অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

করোনা আক্রান্তদের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, হাঁচি ও কাশি। গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ নেয়া রোগীদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর লিঙ্গভেদে পুরুষ ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৯১ শতাংশ নারীর মধ্যে কোনো ধরনের কাশি ও হাঁচি পরিলক্ষিত হয়নি। একই সাথে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ ও ৫৫ দশমিক ৫ জন নারী রোগীর যথাক্রমে স্বাদ ও ঘ্রাণে কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।

গবেষণার ইতিবাচক দিক হচ্ছে, প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর আক্রান্ত ২০০ রোগীর মধ্যে মাত্র একজনকে আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তবে ছয়দিন পর ওই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত ওই ব্যক্তির দুই বছর আগে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল বলে জানা যায়।

গবেষক দলের প্রধান সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে টিকা নেয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলেও মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। মৃত ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। এছাড়া তার বিভিন্ন রোগ ছিল। আক্রান্ত হওয়ার পর তার আইসিইউর প্রয়োজন হয়েছিল। তবে টিকার প্রথম ডোজ নেয়া অন্যরা ভালো আছেন। -ইউএনবি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //