‘নয়া দামান’ গানে নেচে ভাইরাল ৩ চিকিৎসক

ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের নাচের একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। এতে দেখা যায় অপারেশন থিয়েটারের অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালের করিডোরে ‘নয়া দামান’ গানের সঙ্গে নাচছেন তিন চিকিৎসক। তাদের একজন তরুণ, বাকি দুজন তরুণী।

নাচে অংশ নেন ডা. শাশ্বত চন্দন, ডা. কৃপা বিশ্বাস, ডা. আনিকা ইবনাত শামা। মনোমুগ্ধকর এই নাচের উদ্দেশ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাওয়া চিকিৎসকদের অনুপ্রেরণা দেয়া।

এই নাচের পেছনের গল্প সংবাদ মাধ্যমকে ডা. শাশ্বত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যে তিনজন নাচে অংশগ্রহণ করেছি, তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে কাজ করি। আমাদের ইউনিট কিন্তু করোনা ডেডিকেটেড না, তবে এখানে অনেক রোগী ভর্তি হন, যাদের করোনার কারণে অপারেশন ক্যান্সেল হয়ে যায়। আমাদের ইউনিটের অনেক ডাক্তার এখন করোনা ইউনিটে ডিউটি করছেন।’

চিকিৎসকদের বিরামহীন সেবা দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাও কিন্তু অনেক সময় করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে যাচ্ছেন। আর এই মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা ডিপ্রেশন থেকে একটু স্বস্তি দিতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।

‘অনেকেই মনে করেন যে ডাক্তাররা একটু মনে হয় রসকষহীন। তাই আমরা নাচের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি যারা সেবা দিচ্ছেন, তারা যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন।’

নাচের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলে ডা. চন্দন বলেন, ‘আসলে আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা কিছু করার, কিন্তু সেটা তো হাসপাতলের বাইরে করা যায় না। সবাই তখন এটাকে আবার চিয়ারলিডার টাইপের ভাবত।’

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কখনও নাচ শেখেননি ডা. চন্দন। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু ওইভাবে পারি না। তবে আমার সঙ্গে যারা পার্টনার ছিলেন ওনারা ভালো নাচেন।’

নাচের অংশ নেয়া ডা. আনিকা বলেন, ‘আমি আর চন্দন দুই জনই ইন্টার্ন চিকিৎসক। আমরা এখানে সার্জারি বিভাগে কর্মরত আছি। আমাদের সিনিয়র আপু ডা. কৃপা বিশ্বাস এখানকার এইচএমও হিসেবে আছেন।’

ডা. আনিকা বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশের অবস্থা খুব খারাপ। অক্সিজেনের অভাব হয়েছে ওখানে। আবার গত একমাস ধরে আমাদের অবস্থাও ভালো না। এতে করে অনেক চিকিৎসক মানসিক ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন। একটা চাপে আছেন তারা। এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’

নাচের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা খুবই ক্ষুদ্র একটা পরিকল্পনা ছিল। আমাদের রুটিন ওটি থাকে। আমরা যে ইউনিটে কাজ করি সেটা সার্জারি ইউনিট ওয়ান। এই ইউনিটের রুটিন ওটিটা হয় সোমবারের দিন। ওইদিন সব ওটিগুলো ওয়াশ দিয়ে শেষ হবার পর যখন আমাদের ফ্রি সময় ছিল, তখন তিনজন মিলে গল্পের ছলে এই পরিকল্পনা করি।’

তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশের ডাক্তাররাও এমন এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করে থাকেন। আমরা ছোটখাটো একটা কোরিওগ্রাফি করেছে নিজেরাই। তিনিজন মিলেই করি। সঙ্গে সঙ্গে ওখানেই শুট হয়েছে।’

ঢাকার মেয়ে ডা. আনিকা ক্লাসিকাল নাচে আগে থেকেই পারদর্শী।

তিনি বলেন, ‘আসলে এটা তো অনেক সিম্পল ছিল। নাচ শিখেছি, তবে এটা নিজেরাই করেছি। খুবই সাধারণ কোরিওগ্রাফি ছিল। এই টাইপের ফ্রি স্টাইল নাচ কখনও শিখিনি। আমি আর কৃপা আপু একসঙ্গেই নাচ শিখেছি বুলবুল লতিতকলা একাডেমি থেকে। আমরা ক্লাসিক্যাল ডান্সার।’

ভাইরাল নাচের দৃশ্যটির ভিডিও করেছেন একজন ওটি বয়। ডা. চন্দন নিজেই সেটি সম্পাদনা করে ফেসবুক পেজে আপলোড করেন।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল ভারতের কেরেলা রাজ্যে দুই মেডিক‌্যাল শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //