ভারতীয় ট্রিপল মিউট্যান্টের আতঙ্কে বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসের ডাবল মিউট্যান্টের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই, এবার ট্রিপল মিউট্যান্টের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। ভাইরাসটি ভারতে তিনবার পরিবর্তন হয়ে নতুন একটি রূপ নিয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ট্রিপল মিউট্যান্ট। 

বাংলাদেশে বর্তমানে করোনার যে ভাইরাস রয়েছে এর চেয়ে তিন গুণ বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা সম্পন্ন বেঙ্গল স্ট্রেইন বা বেঙ্গল মিউট্যান্ট বা ট্রিপল মিউট্যান্ট। এমনকি শিশুদেরও আক্রান্ত করছে নতুন এই স্ট্রেইন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর যে বিপর্যস্ত অবস্থা চলছে ভারতে, তা এই ট্রিপল মিউট্যান্টের কারণে হচ্ছে বলে সেখানকার গবেষকরা বলছেন। 

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় এবং মানুষের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চলাফেরা থাকায় বাংলাদেশে ভারতের এই ট্রিপল মিউট্যান্টের করোনাভাইরাস চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

বিপজ্জনক এই মিউট্যান্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উদ্বেগজনকহারে করোনা সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ইউকে ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা হচ্ছে; কিন্তু ভারতের নতুন ট্রিপল মিউট্যান্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ল কি-না, তা নিয়ে এখনো গবেষণা হয়নি। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। 

বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিশাল সীমান্ত রয়েছে। ফলে ট্রিপল মিউট্যান্ট এখানে আসাটা অসম্ভব কিছু নয়। গত ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে; কিন্তু অনিবার্য কারণে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বেশিদিন বন্ধ রাখা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের জন্য বিপদটা থেকেই যাবে। 

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সীমান্ত সংলগ্ন বন্দরগুলোতে তাৎক্ষণিক অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করতে পারলে জানা সম্ভব হতে পারে যে, কারা করোনা নিয়ে দেশে ঢুকেছে। অ্যান্টিজেন টেস্টের ফল ২০ থেকে ৩০ মিনিটে জানা যায়। ফলে আক্রান্তদের তাৎক্ষণিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যেতে পারলে ভাইরাসটির গতি কমিয়ে দেয়া যাবে। যদি সেটা সম্ভব নাও হয়, তাহলে ভারত থেকে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন, তাদের সবাইকে আরটি পিসিআর পরীক্ষা করিয়ে দেশে ঢোকানো উচিত হবে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে চলাচলকারীদের অন্তত ৯০ শতাংশ শনাক্ত করা যাবে। 

টিকা আনার ব্যর্থতা ঢাকতে চলছে পরষ্পরকে দোষারোপ  

টিকা আনতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে এখন চলছে পরস্পরকে দোষারোপ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের টিকা আনার দায়িত্ব ছিল বেক্সিমকো ফার্মার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারত থেকে টিকা আনার দায়িত্ব বেক্সিমকোর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় বেক্সিমকোর চাপেই সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি। যদিও চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল।’ 

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, টিকার জন্য আমরা অর্ধেক অর্থ পরিশোধ করেছি। অথচ সেরাম আমাদের টিকা দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত ভারতকে চাপ দেওয়া। এ মুহূর্তে বেক্সিমকোর আর করার কিছু নেই।’ 

টিকা আনতে ব্যর্থ হয়ে এভাবে পরস্পরকে দোষারোপ করাকে খুবই অনভিপ্রেত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, দোষারূপ না করে টিকার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের পাওনা টিকা কীভাবে আনা যায়। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের টিকা প্রয়োজন। ভারত থেকে পাওনা টিকা আনতে সব ধরনের চেষ্টা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের যেসব দেশে করোনার টিকা বানাচ্ছে, সেসব দেশের কাছ থেকে দ্রুত টিকা নিয়ে আসতে হবে।’ 

প্রথম ডোজ প্রাপ্ত সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজ নেই 

প্রথম ডোজ প্রাপ্ত সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা মজুদ নেই সরকারের কাছে। সেনাবাহিনীর কাছে ১ লাখ ডোজ টিকা ছিল। এটা পেয়েছে ভারতের সেনাপ্রধানের বাংলাদেশ সফরের সময় উপহার হিসেবে। এটা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বাইরে হয়তো সাধারণ মানুষকে দেওয়া হবে না। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের কাছে ১৮ লাখ ১ হাজার ৩০০ ডোজ টিকা ছিল। 

ইতিমধ্যে প্রথম ডোজ টিকা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছে এদের সবাইকে দ্বিতীয় টিকা দিতে হলে সরকারকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও ১৪ লাখ ৩৯ হজার ২৩২ ডোজ টিকা সংগ্রহ করতে হবে। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম ২৫ মে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বেক্সিমকো মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ১০ লাখ ডোজ সিরামের টিকা এনে দেবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট ঘোষণা দিয়েছে তারা সামনের জুন-জুলাইয়ের আগে কোনো টিকা দিতে পারবে না। ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে সিরাম বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। 

৪০ লাখ রাশিয়ান টিকা আসবে মে মাসে  

টিকা আনার তৎপরতায় লেগে আছে সরকার। গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ান টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মে মাসে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি নামক টিকার ৪০ লাখ ডোজ আসবে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। 

এর বাইরে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল চেষ্টা করছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা বাল্ক (বড় কনটেইনারে এনে এখানে ভায়াল বানানো) রাশিয়ান টিকা উৎপাদন করতে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //