স্বীকারোক্তি দেয়ার কথা ছিল বাবুলের, পরে অস্বীকৃতি

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে উল্টে যান। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তিনি আদালতে গিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টান। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড আবেদন না করায় বাবুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। 

সোমবার (১৭ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত এ আদেশ দেয়। এর আগে কঠোর গোপনীয়তায় তাকে আদালতের খাস কামরায় নেয় পিবিআই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য তিনি রাজি ছিলেন। আমরা সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নিয়ে আদালতে তাকে হাজির করি। কিন্তু বিচারকের খাস খামরায় গিয়ে তিনি সময়ক্ষেপণ করার পর জানান স্বীকারোক্তি দেবেন না।

দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ সেরকম প্রস্তুতি ছিল না। রিমান্ডের বিষয়ে আগামীকাল স্যারদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সিএমপির এসি প্রসিকিউশন কাজী সাহাব উদ্দীন আহমেদ বলেন, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে পিবিআই বাবুল আক্তারকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে হাজির করায় কোনো রিমান্ড আবেদন করেনি। তবে তিনি স্বীকারোক্তি না দেয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত বুধবার (১২ মে) দুপুরে মিতু বাবার মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত বাবুল আক্তারের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।

মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা তদন্ত করার জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর কাছে হস্তান্তর করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

গত ১২ মেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার কথা বলে দেননি বলে জানিয়েছিলেন পিবিআই প্রধান। গত ১২ মে বনজ কুমার মজুমদার এক টিভি টকশোতে যুক্ত হয়ে একই কথা বলেছিলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, ‘বুধবার মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও আগ মুহূর্তে গিয়ে তা করলেন না। ফলে মামলাটি আরও পাঁচ দিন বিলম্ব হলো। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনতে হলো। আর কজন আসামি বাইরে আছে, তাদেরও ধরতে হবে। কিছু কাগজপত্র জোগাড় করা বাকি, তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। সময় নির্ধারণ করে বলতে না পারলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি করা হবে।’

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের প্রকাশ্য সড়কে গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ওই দিন রাতে তার স্বামী তৎকালীন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অনেকবার আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দেয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোনো অগ্রগতি ছিল না। বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করতে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি এতোদিন। গোয়েন্দা পুলিশ এর আগেও বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। 

গত মঙ্গলবার (১১ মে) দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততা মেলায় বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে আইনিভাবে বাদীকে গ্রেপ্তারের সুযোগ না থাকায় আদালতে তাকে হাজির করার পর তার পিতার মোশাররফ হোসেনের করা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। একই সাথে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়। 

গত ১২ মে মিতুর বাবার করা মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হলেন—কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেসামুল হক ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খায়রুল ইসলাম, সাইফুল ইসলম সিকদার, শাহজাহান মিয়া। এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আগে থেকেই জেলে। সাকুকে ওই দিন রাতে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে এবং বাবুল আগে থেকেই পিবিআইয়ের হেফাজতে ছিল। এদের মধ্যে মুছাকে ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে বারবার। অন্যদিকে শুরু থেকে কালু অধরা। এছাড়া ভোলা ও শাহাজাহান জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //