আইইডিসিআর’র সুপারিশ উপেক্ষা

মহামারিতেও ভোট করতে অনড় ইসি

করোনাভাইরাসের বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক গবেষণায়। ওই গবেষণায় যে ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল তার ৪০টিতেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেটি ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা ও গোপালগঞ্জ থেকে সংগৃহিত নমুনার জিনোম সিকোয়েনসিং করে এ তথ্য প্রকাশ করে। বর্তমানে সীমান্তবর্তী জেলাসহ আরও কিছু এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুনভাবে পাঁচ শর্ত দিয়ে দেশব্যাপী বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিধিনিষেধে বলা হয়েছে- জনসমাগম হয় এমন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।

তবে সবকিছুকে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন করোনা সংক্রমণরোধে সরকারের চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যেই গত ২ জুন স্থগিত থাকা ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), ১১টি পৌরসভা, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের কিছু উপনির্বাচনের পুনঃতারিখ ২১ জুন এবং ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ শূন্য আসনে ১৪ জুলাই উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে কমিশন। 

এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভোটগ্রহণ না করার আহবান জানায় আইইডিসিআর। তবে নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে অনড় নির্বাচন কমিশন। তফসিলের তারিখ অনুযায়ীই ভোট হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইসি। এমনকি নির্বাচনি এলাকা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠিও দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, লক্ষীপুর-২, ১১ পৌরসভা এবং ৩৬৭ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে ২১ জুন। অথচ, অধিক সংক্রমণের জেলা সাতক্ষীরায় চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। বাগেরহাট-খুলনাও অধিক সংক্রমণের জেলা। এই তিন জেলার ১৪২ ইউনিয়নে এদিন ভোট হওয়ার কথা।

এদিকে, ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে দেওয়া ওই চিঠিতে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠান সময়কালে লকডাউন পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের সামগ্রিক কার্যক্রম লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার অনুরোধ করা হয়। সেক্ষেত্রে সামগ্রিক নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশনা রাখা হবে বলে জানানো হয়। 

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে উল্লিখিত নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা ও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন অফিস, স্থাপনা বা এলাকা লকডাউনের আওতা বহির্ভূত রেখে নির্দেশনা জারি করার জন্য অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।  

এদিকে, গত ৫ জুন করোনা সংক্রমণের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেয় আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলা সমূহে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগামী (অধিকতর উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন জেলা যেমন- চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাজশাহী, কক্সবাজার, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট, ফেনী, গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুর)। 

এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে ৮টি বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করে আইইডিসিআর। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- করোনা সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে সংক্রমণের অনুকূল পরিস্থিতিতে আয়োজন করা।

যদিও রবিবার চলমান বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে এই বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে গত রবিবার ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচনী এলাকা লকডাউনের আওতার বাইরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার/জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠানো হয়।

ইসি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলা প্রশাসন থেকে এই মুহূর্তে নির্বাচন আয়োজন না করার জন্য কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে।

ইসি'র অতিরিক্ত সচিবে অশোক কুমার দেবনাথ জানান, দু'জন জেলা প্রশাসক নির্বাচন না করার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা যদি লিখিত আকারে তাদের এলাকার নির্বাচন বন্ধ করার জন্য চিঠি দেন, তাহলে আমরা সেই নথি কমিশন বৈঠকে উপস্থাপন করবো। পরবর্তীতে কমিশন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। এখন পর্যন্ত আমাদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

এর আগে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় পৌরসভা নির্বাচন আয়োজন না করার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন পৌর মেয়র। সেসময় তাদের অনুরোধ আমলে না নিয়ে সময়মতো নির্বাচন আয়োজন করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। 

গত ৭ মার্চ ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), ১১টি পৌরসভা, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনের সময়সূচির প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। এসব ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা ছিলো ১১ এপ্রিল। করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে গত ১ এপ্রিল সব ধরনের নির্বাচনের আয়োজন বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে গত জুন স্থগিত থাকাগুলোর নির্বাচনের পুনঃতারিখ ও নতুন করে ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ শূন্য আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে কমিশন।

দেশে করোনায় এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ জনের। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩২২ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ জনে। 

মৃত্যু ও শনাক্তের এ সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত মাসের ৯ তারিখে করোনায় ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল সোমবার ৩০ জনের মৃত্যু আর ১ হাজার ৯৭০ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর।

মঙ্গলবার (৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭, রাজশাহীতে ১১, খুলনায় ৬, সিলেটে ২, রংপুরে ৫ ও ময়মনসিংহে ২ জন মারা গেছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //