ঢাকায় সংক্রমণ বাড়লে সামাল দেয়া নিয়ে উদ্বেগ

চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। গত একমাস যাবত হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশ কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় কভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল শয্যার ৭৭ শতাংশ খালি। ঢাকায় করোনাভাইরাসের আরেকটি ঢেউ আঘাত হানার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি কতটা সামাল দিতে পারবে সেটি নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট উদ্বেগ।

এক মাস আগে শনাক্তের হার সাত শতাংশে নেমে আসলেও এখন সেটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে। সীমান্তের জেলাগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও সংক্রমণের হার বাড়ছে। ফলে জনবহুল ঢাকা শহরে করোনাভাইরাসের আরেকটি বড় ধরণের ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখনো ৪০ শতাংশের উপরে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে সেসব জেলায়। গত ১৫ দিনে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দেড়শ রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, সেখানে করোনা সংক্রমণের এখন পিক টাইম বা সর্বোচ্চ অবস্থা চলছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এটাকে আর বাড়তে না দেয়া। পরিস্থিতি আগে যা ছিলো সেটাই আছে।

শুধু সীমান্তবর্তী জেলাই নয়, ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঢাকার বেশ কাছেই টাঙ্গাইল জেলায় এখন করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়তির দিকে।

এক সপ্তাহ আগে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ঢাকা জেলায় চার শতাংশ থাকলেও এখন এটি প্রায় ছয় শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, শনাক্তে হার এখন দৃশ্যত কম মনে হলেও ধীরে-ধীরে এটি বাড়তে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমদ বলছেন, ঢাকায় করোনাভাইরাসে প্রথম ঢেউ আঘাত করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি কতটা সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে সেটা মার্চ-এপ্রিল মাসের মতো হবে কি না। নাকি পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আঘাত করলে জনবহুল ঢাকা শহরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি সামাল দিতে পারবে কিনা? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে কভিড ডেডিকেটেড সাত হাজার শয্যা আছে হাসপাতালে। রোগীর সংখ্যা যদি আট হাজার হয়ে যায় তাহলে সেটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। ঢাকা শহরে শনাক্তের হার এখনো ছয় শতাংশের নিচে আছে। কিন্তু সারা বাংলাদেশে চারপাশ থেকে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন ঢাকায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবার আশঙ্কা থেকেই যায়।

গাণিতিক মডেল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এরই মধ্যে ধারণা দিয়েছেন, জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে পারে, যখন দিনে হয়তো ১০ হাজারের মতো শনাক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপের আওতায় যেসব বিশ্লেষক এ সম্ভাব্য চিত্র এঁকেছেন, তারা সেটি গত ৩০ মার্চ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। পরিস্থিতি সেদিকে গেলে ঢাকার অবস্থা আবারো নাজুক হবে বলে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজন অনুযায়ী লকডাউন কার্যকরের ক্ষমতা দিয়ে চলাচলে বিধি-নিষেধের মেয়াদ আরো একমাস বাড়িয়েছে সরকার।

এ নিয়ে দশম বারের মতো বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হলো। পাঁচই এপ্রিল প্রথম চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে বিধিনিষেধ।

বুধবার (১৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কভিড ১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সব বিধিনিষেধ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এ বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা ১৬ জুন ২০২১ তারিখ থেকে ১৫ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।

১. কভিড-১৯ এর উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সাথে আলোচনা করে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ বিধি মোতাবেক লকডাউনসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

২. সব সরকারি, আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।  

৩. সব পর্যটন কেন্দ্র রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৪.  জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান- ওয়ালিমা, জন্মদিন , পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।

৫. খাবারের দোকান ও হোটেল- রেস্তোরাঁসমূহ সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (টেকঅ্যাওয়ে/অনলাইন) করতে পারবে এবং আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে পারবে।

৬. সব ধরনের গণপরিবহন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর চলতি গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথমবার বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে ১৬ জুন পর্যন্ত কার্যকর করা হয়। এরইমধ্যে আজ বিধিনিষেধ ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //