সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ

এতদিন কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) শনাক্ত ও মৃত্যু তুলনামূলক কম থাকায় ঢাকায় অনেকটাই স্বস্তি ছিল। তবে সেই স্বস্তি এখন আর থাকছে না। কারণ দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকায় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে দৈনিক শনাক্তের হার, যার ৬৮ শতাংশই ডেল্টা ধরন। সারা দেশে যে হারে এই শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতে পরিকল্পনা জরুরি বলেও মনে করেন চিকিৎসকরা।

 তাছাড়া চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় দৈনিক শনাক্ত ৫ থেকে ৬ শতাংশে ছিল। সেটা এখন উঠে এসেছে ১৮ শতাংশে। ঢাকার বাইরে গ্রাম পর্যায়েও কঠোর পরিশ্রমী মানুষের মধ্যে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতেও ধীরে ধীরে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, যা নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে করোনার থাবা মারাত্মক রূপ নিলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না তারা। অলিগলি সর্বত্রই মানুষের জটলা। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের উদ্যোগও তেমন চোখে পড়ছে না। সবকিছু এমন ঢিলেঢালা চললে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ঢাকার বাইরে যেভাবে সংক্রমণ বেড়েছিল, ঠিক একইভাবে ঢাকায়ও সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। আমি আশঙ্কা করছি যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা শহরে ভাইরাসের সংক্রমণ খুলনা বা রাজশাহীর মতোই খারাপ হয়ে যেতে পারে।

 তিনি আরও বলেন, আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম দেশে জুলাইয়ের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। এখন সংক্রমণের গতি দেখে মনে হচ্ছে জুলাইতে যাওয়ার আগেই তৃতীয় ঢেউ ঘটে যাবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, কোভিড পরীক্ষা বাড়ানো ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের অন্যদের থেকে আলাদা করার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। সবাইকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে। তাহলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মতো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে তুলনামূলক পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেখানে বিনামূল্যে টেস্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে নমুনা টেস্টের সংখ্যা সেই তুলনায় বাড়ছে না। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঢাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। অর্থাৎ দেশের সীমান্ত এলাকাসহ নোয়াখালী ও মানিকগঞ্জ পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন সাবধান না থাকলে সামনে বিপদ হবে। করোনা সংক্রমণ বেশি। এসব এলাকার আম ব্যবসায়ীদের জন্য সংক্রমণ বাড়তে পারে।

এদিকে দেশব্যাপী গত দুই সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি। বিভিন্ন জেলায় যে পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে তাতে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এপ্রিলে চূড়ান্ত স্পর্শ করার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা হলেও ছিল কমতির দিকে। এর মধ্যে এপ্রিলের শেষ থেকে জুনের শুরুর একমাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে মাত্র চার দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের কম। তবে ওই জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফের চিত্র বদলে যেতে থাকে। ৪ জুন থেকে শুরু করে ১৭ জুন পর্যন্ত টানা দুই সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে শেষ ১০ দিনেই সংক্রমণের হার ১২ শতাংশের বেশি রয়েছে। সর্বশেষ দুই দিন ঢাকায় শনাক্তের হার ঠেকেছে ১৮ শতাংশে।

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৪৬৬ জনের। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ জনে।

শনিবার (১৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭২৫ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৪৬ জন। 

২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৯৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৪টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৩ লাখ ৫ হাজার ৫০৩টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৬৭ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগেরই ২৪ জন। এছাড়া, ঢাকায় ১৪, চট্টগ্রামে ১১, রাজশাহীতে ৮, সিলেটে ১, রংপুরে ৮ এবং ময়মনসিংহে ১ জন মারা গেছেন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ এবং ৩৩ জন নারী। এদের মধ্যে মাত্র একজন বাসায় মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ১৩ হাজার ৪৬৬ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৬৫৭ জন এবং নারী ৩ হাজার ৮০৯ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৭ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২২, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১২, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৩ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের ৩ জন রয়েছেন।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //