অবিরাম বৃষ্টি

অবিরাম বৃষ্টি: পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের শঙ্কা

চট্টগ্রামসহ আশেপাশের পার্বত্য অঞ্চলে থামছে না বৃষ্টি। কখনো ভারি, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে বেড়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। ফলে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এসব অঞ্চলে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ হয় মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ হয় না।

২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে মারা যান ৩০ জন। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে বসবাস করছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি।  

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা পিপলস ভয়েস’র সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করছেন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। পুরো জেলায় পাহাড়ে বসবাসকারীর সংখ্যা এক লাখের ওপরে। এ বছরও যদি বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয় তাহলে পাহাড়ধস হতে পারে। প্রাণহানিও ঘটতে পারে।’

পাহাড়ে বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের। যারা থাকছেন তাদের বেশিরভাগই ভাড়াটিয়া। তারা দখলদার নয়। যারা পাহাড় দখলদার, তারা পাহাড়ে থাকেন না। কিন্তু পাহাড় দখল করেন। পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করেন। পাহাড় কাটার ফলে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, সেই সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।  ফলে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে দুর্ঘটনা ঘটছে।

পরিমল নামের একজন পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে থাকেন বায়েজিদ থেকে সীতাকুণ্ডে যাওয়া সিডিএ লিংক রোডের পাশের পাহাড়ে। তিনি বলেন, মাসে যা আয় করি, এখানে থাকা ছাড়া তো উপায় নেই। ধস হলে বিপদ হবে জেনেও এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে চলে যাব।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ের ঢাল ও চূড়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ২৪টি টিপরা পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে চারটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারীদের দাবি, নিরুপায় হয়েই এমন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাঁরা।

ডেইজি দাশ নামে একজন বলেন, প্রভাবশালী একজনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছলিমপুর এলাকার পাহাড়ে বসবাস শুরু করি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে।

পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের সরাতে সারা বছর প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় উচ্ছেদে তোড়জোড়। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করলেও প্রশাসনের এ বিষয়ে তেমন নজর নেই।

অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, বিভিন্ন পাহাড়ের মালিকানা নিয়ে উচ্চ আদালতে রীটসহ নানান জটিলতায় বসবাসরতদের সরানো যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় থেকে মানুষকে উচ্ছেদ এবং পাহাড় রক্ষা করতে হলে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ে ব্যাপকভাবে বনায়ন করতে হবে। ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর টেকনিক্যাল কমিটি যে ৩৭ দফা সুপারিশ করেছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //