টিকা না দেয়ায় ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দিল্লি টিকা দিচ্ছে না বলে বাংলাদেশ ইলিশ পাঠাচ্ছে না– ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার-এর এমন খবরে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ‘আমরা এতো নিচু মানসিকতার নই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার (২২ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকেরা বিষয়টি তার নজরে আনলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক বাক্যের এই মন্তব্য করেন।

কোভিড টিকা পাঠায়নি দিল্লি, ইলিশও আসছে না ঢাকা থেকে, প্রশ্নের মুখে মোদির ‌‘সোনালি অধ্যায়’- শিরোনামে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার বিদেশ মন্ত্রকের বহু বিজ্ঞাপিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সোনালি অধ্যায়’-এর রং এই মুহূর্তে যথেষ্ট ফিকে। বাংলাদেশের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ভারতীয় করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ নিয়ে বসে রয়েছেন। সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ভারত জানাচ্ছে, আপাতত ভ্যাকসিনের আর একটি ডোজও পাঠানো সম্ভব নয়। ঢাকা সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আর চাপা থাকছে না সে দেশে। যার সরাসরি প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ প্রসংগে।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশের। তা সত্ত্বেও গত বছর জামাইষষ্ঠীর সময়ে পশ্চিমবঙ্গে দু'হাজার টন ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছিলো সরকার। এর আগেও একইভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পদ্মার ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এবছর ব্যতিক্রম ঘটছে। বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে, ইলিশ পাঠানো সম্ভব নয়। কেন? 

স্পষ্ট উত্তর না মিললেও ভারতীয় কূটনীতি মহলের অভিমত, ভ্যাকসিন না পাঠানোর জন্যই বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ। তাদের মতে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এতোটাই আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে যে, ইলিশ কূটনীতির আবহই নষ্ট হয়ে গেছে।

বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো ভারত। প্রাথমিকভাবে ১৬ লাখ ভ্যাকসিন পাঠানোও হয়েছিলো। যে ১৬ লাখ মানুষ ভারতের তৈরি টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছিলেন, তারা এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যায়। কারণ, দ্বিতীয় ডোজ পাঠায়নি ভারত। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার আগে বিদেশে তা রফতানি করা হবে না। ফলে দ্বিতীয় ডোজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ১৬ লাখ মানুষ দ্বিতীয় টিকা পাননি। এই পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও চিড় ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওঠাপড়ায় ইলিশ এক কূটনৈতিক প্রতীক। তিস্তা জলবন্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বিবাদ অনেক দিনের। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বার বার এই চুক্তিতে বাদ সেধেছেন। এর আগে স্থলসীমান্ত চুক্তি সই করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন, ইলিশ নিয়ে কিছুটা রসিকতার ঢংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগে কথা হয়েছিলো তার। ভোজের তালিকায় ইলিশের পঞ্চপদ দেখে মমতা হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন তাঁরা ইলিশ আটকে রেখেছেন? হাসিনার জবাব ছিলো, 'তিস্তার পানি এলেই মাছ সাঁতার কেটে চলে যাবে ওপারে!'

আনন্দবাজার পত্রিকা বলে, তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে সেই আবেগ আপাতত সংযত রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গঙ্গা এবং পদ্মা দিয়ে তারপর আরও অনেক জলই গড়িয়েছে। লকডাউনের প্রথম পর্বে বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকতে দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তারপর টিকা নিয়ে সমস্যা- সব মিলিয়ে দুই দেশের সৌজন্যের সম্পর্কে যথেষ্ট চিড় ধরেছে বলেই মনে করছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। ভারতীয় কূটনৈতিক মহলও সেই মতকে মান্যতা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বহু বিজ্ঞাপিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সোনালি অধ্যায়’-এর রং এই মুহূর্তে যথেষ্ট ফিকে হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //