দেশে এখন মডার্না-সিনোফার্মের ৪৫ লাখ ডোজ টিকা

কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে দেশে। আর চীনের সিনোফার্ম থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা ২০ লাখ ডোজের মধ্যে ১০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে।

এর ফলে পূর্ব-নির্ধারিত সময়েই দেশ দু’টি থেকে পাঠানো মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা এখন দেশে আছে। 

আজ শনিবার (৩ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দ্বিতীয় ধাপে সিনোফার্মের ১০ লাখ ও সকাল পৌনে ৯টার দিকে মডার্নার সাড়ে ১২ লাখ ডোজ টিকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। 

এর আগে গতকাল শুক্রবার (২ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মডার্নার ১২ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১টার দিকে সিনোফার্মের ১০ লাখ ডোজ টিকা বহনকারী বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাগ্রহণের জন্য রাতে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর সকালে দ্বিতীয় ধাপে আসা টিকাগ্রহণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারি পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দু-দফা করে চার দফায় মডার্না ও সিনোফার্মের মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর আগে এই সুবিধার আওতায় একটি চালানে ফাইজারের এক লাখ ছয় হাজার ডোজ টিকা এসেছে দেশে।

চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট কোং লিমিটেডের কাছ থেকে এই টিকা কিনেছে সরকার। সিনোফার্মের কাছ থেকে মোট এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা কেনার কথা রয়েছে।

গত ২৭ জুন দেশে অষ্টম টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এর আগে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুতনিক, চীনের সিনোফার্ম, বেলজিয়ামের ফাইজার, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের জনসন ও সুইডেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে।

মডার্নার টিকা বুঝে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আগামীতে টিকার আর কোনো অভাব হবে না। টিকার সংকটে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচিতে ছন্দপতন হয়েছিল। এসব টিকা আসায় গণটিকাদান কর্মসূচি আবারো গতি পাবে। টিকাদান কার্যক্রম আমরা জোরেশোরেই শুরু করেছিলাম। টিকা না পাওয়ায় মাঝখানে কিছুদিনের জন্য টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন আমরা আনন্দের সাথে বলতে পারি, আগামীতে টিকার আর কোনো অভাব হবে না।

ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের প্রথম তিনমাসের মধ্যে বা তার পরে জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা আসবে। তাদের একটি টিকা একজনকেই দেয়া হবে। তাহলে তাদের টিকাই আমরা সাত কোটি মানুষকে দিতে পারব।

চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগস্টে ১৫ লাখ টিকা আসবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি তাদের এই টিকা দেয়া হবে।

গত ২৭ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর দেশে মডার্নার টিকার জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দেয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, মডার্নার টিকা ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সীদের দেয়া যায়। প্রত্যেককে এই টিকার দুই ডোজ করে দিতে হয়। টিকাটির প্রথম ডোজ নেয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে। মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা সংরক্ষণ করতে হয়। টিকাটি ব্যবহারের আগে ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন এবং ৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।

মডার্নার এই টিকা গত ২২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে গতবছরের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং ৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান মেডিসিন অথরিটির অনুমোদন পায় টিকাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মডার্নার টিকা করোনার বিরুদ্ধে ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, টিকা নিতে এখন পর্যন্ত মোট ৭২ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৯ জন নিবন্ধন করেছেন। তাদেরকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি এক লাখ নয় হাজার ৯২৮ ডোজ, সিনোফার্মের ৬৬ হাজার ২৩৮ ডোজ এবং ফাইজারের ৯২৪ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //