স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞায় টিআইবির উদ্বেগ

মহামারিকালে গণমাধ্যমের কাছে সরকারি হাসপাতালগুলোর রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানে নিষেধাজ্ঞায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাতিলের দাবিও জানিয়েছে সংস্থাটি। 

অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে সামষ্টিকভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর বিপরীতে কাদের স্বার্থে এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো, তা খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহবান জানায় টিআইবি।

শনিবার (১০ জুলাই) দেয়া এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। এমন সময় ঢাকা জেলাধীন সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য ও রোগীর সেবা-বিষয়ক যেকোনো তথ্য গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ মুক্ত গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক অধিকার। এতে তথ্য অধিকার আইনলব্ধ ‘তথ্য জানার অধিকার পুরোপুরি লঙ্ঘন হচ্ছে। একইসঙ্গে তা স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং গণমাধ্যমের অবাধ তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা প্রদানের শামিল।

তিনি বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলা লকডাউনে এমনিতেই সাধারণের জন্য তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত, সেখানে গণমাধ্যমকে তথ্য না দেয়ার এমন নির্দেশ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার হালনাগাদ তথ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করবে, তেমনি মাঠ পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার সত্যিকারের চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, আদেশের সূত্র হিসেবে সিভিল সার্জন যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার কথা বলেছেন, তারা কারা? এবং কী উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন? এটি মহামারি নিয়ন্ত্রণে কী সুফল বয়ে আনবে? সেটি জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার করতে হবে এবং বারবার এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপের অশুভ প্রয়াসের চক্র বন্ধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতে চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য গোপনের অভিপ্রায়ের অংশ হিসেবে এই আদেশ কি না, এমন সন্দেহ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ নির্দেশনা দেয়ার পরদিনই স্বাস্থ্য অধিদফতর ১০টির বেশি জাতীয় দৈনিকে রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের অর্থব্যয়ে “করোনার ভয়াবহতা ঠেকাতে বিধিনিষেধ আন্তরিক ও কঠোরভাবে পালনের আকুল আবেদন” শীর্ষক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যখাতে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হয়নি বলে সাফাই গাওয়ার অপচেষ্টা করেছে। অথচ গত একবছরে স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগ, ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগুনতি অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার সংবাদ পত্রিকার পাতা খুললেই পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপিত প্রতিবেদনেও যা প্রতিভাত হয়েছে। টিআইবির সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতেও এ খাতে সুশাসনের ঘাটতির নানা চিত্র উঠে এসেছে, যা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। তাই এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও তথ্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মূলত স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ঢাকার প্রচেষ্টা একইসূত্রে গাঁথা বলে মনে করা মোটেও অবান্তর হবে না। বিশেষ করে, যখন বিগত বছরগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে সংঘটিত অধিকাংশ দুর্নীতি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে, তখন বিধি-নিষেধের মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার তথ্য গোপনের বিস্তৃত সুযোগ তৈরি করবে; যা মহামারি মোকাবিলায় নেওয়া সব ইতিবাচক উদ্যোগকেও বিনষ্ট করবে। তাই অবিলম্বে এই ধরনের স্বেচ্ছাচারী আদেশ প্রত্যাহার করে অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে কার্যকরভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //