ওষুধের দোকানে মডার্নার টিকা বিক্রি, বড় চক্র জড়িতের শঙ্কা

করোনার টিকা বাইরের ওষুধের দোকানে বিক্রির ঘটনা ধরা পড়েছে৷ পুলিশ এই অভিযোগে একটি ওষুধের দোকানের মালিককে মডার্নার টিকাসহ গ্রেফতার করেছে৷ তিনি গণটিকা কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এর আগে বাসায় গিয়ে টিকা দেয়ার অভিযোগও আছে৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে গণটিকার সময় আরো টিকা বাইরে চলে গেছে৷ 

পুলিশ আরো কয়েকজনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দাবি করেছেন তারা যেভাবে টিকা বিতরণ করেন তাতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ তারপরও বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করেছেন৷

বুধবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’  নামে একটি ক্লিনিক ও ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে আটক করে পুলিশ৷ তার কাছ থেকে দুই ভায়াল মডার্নার টিকা উদ্ধার করে৷ প্রতিটি ভায়ালে ১৪ ডোজ টিকা থাকে৷ তার কাছ থেকে ২০টি খালি প্যাকেটও উদ্ধার করা হয়৷ প্রতিটি খালি প্যাকেটে ১০টি করে ভায়াল থাকার কথা৷

দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমাদের কাছে আগে থেকেই খবর ছিলো যে ওই ওষুধের দোকানে করোনার টিকা বিক্রি হয়৷ নিশ্চিত হয়ে দোকানে অভিযান চালানোর পর তার কাছে একটি অ্যাম্পুল (ভায়াল) পাওয়া যায়৷ তবে তা খালি ছিলো৷ এরপর পাশেই তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ফ্রিজে মডার্নার টিকার আরেকটি ভায়াল পাওয়া যায়৷ আর ২০টি খালি প্যাকেটও তার বাসায় পাওয়া যায়৷’ 

তিনি জানান, ‘অভিযানের সময় পাশেরই একজন দোকানদার হুমায়ূন কবির জানান চার-পাঁচদিন আগে তিনি ও তার স্ত্রী ৫০০ টাকা করে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তার কাছ থেকে৷ গণটিকা দেয়া শুরুর কয়েক দিন আগেই এলাকার লোকজন জানতে পারে ওই ওষুধের দোকানে টিকা পাওয়া যায়৷’

পুলিশ মনে করছে তার সাথে আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে৷ তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে৷

পুলিশের উত্তরা জোনের ডেপুটি কমিশনার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘আটক ব্যক্তি প্যারামেডিকেল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত৷ তিনি উত্তরখান এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গণটিকা কর্মসূচির সময় একটি কেন্দ্রে সহায়তাকারীর দায়িত্ব পালন করেছে বলে জানিয়েছে৷ তখন সে টিকার দুইটি ভায়াল নিয়ে আসে বলে স্বীকার করেছে৷ তবে ২০টি খালি প্যাকেটের ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য সে আমাদের জানায়নি৷’ 

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ তারা জানিয়েছে এই টিকা বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই৷ ভায়াল ও প্যাকেটে মডার্না লেখা রয়েছে৷ এখন এটা আসলেই টিকা কী না তা পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে৷ সেই পরীক্ষাও করা হবে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু টিকার হিসাব রাখি৷ বিতরণ করে ইপিআই৷ টিকা বাইরে গেলে দায়িত্ব তাদের৷’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম প্রথমে দাবি করেন টিকা নয় খালি প্যাকেট পাওয়া গেছে৷ পরে তাকে টিকা পাওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি৷ বিস্তারিত জানিনা৷ তবে আমাদের যে সিস্টেম তাতে টিকা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ তাপরও আমরা এটা তদন্ত করে দেখছি৷’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ওটা টিকা না অন্যকিছু তাও তদন্ত করে দেখব৷ এই ধরনের অভিযোগ এই প্রথম পাওয়া গেলো৷’ 

পুলিশ আশঙ্কা করছে হয়তো আরো অনেকে টিকা এভাবে বাইরে নিয়ে থাকতে পারেন৷ এর সাথে বড় কোনো চক্রও জড়িত থাকতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান ডেপুটি কমিশনার সাইফুল ইসলাম৷ 

আর ৭ থেকে ১২ আগস্ট গণটিকা কর্মসূচির সময় টাকার বিনিময়ে টিকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ বাসায় গিয়ে টিকা দেয়ার অভিযোগও আছে৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে গণটিকার সময় আরো টিকা বাইরে চলে গেছে৷ সংসদীয় কমিটিও টিকা নিয়ে অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছে৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা টিকার শুরুতেই এই ধরনের আশঙ্কার কথা বলেছিলাম৷ এবার তা সত্য প্রমাণ হলো৷ আমার মনে হয় দক্ষিণ খানের মত টিকা বাইরে যাওয়ার আরো ঘটনা ঘটেছে৷ এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ টিকা নিয়ে যে অব্যবস্থাপনা তারই ফল এটা৷’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //