বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

বিভাজনের পথ পরিহার করে, হাতে হাত রেখে শান্তির পথে এক সাথে চলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। 

‘ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্স-২০২১’ উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়-সঙ্গত, অধিকার-ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বাংলাদেশের ‘অক্লান্ত প্রচেষ্টার’ কথা তুলে ধরেন।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই শান্তি সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, আমরা শান্তি বজায় রাখতে অত্যন্ত আন্তরিক এবং যেকোনো মূল্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা ও জোরদার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি বলেন, দেশের সংবিধানের সাথে সঙ্গতি রেখে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় থাকাই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সর্বোত্তম সুরক্ষা এবং ‘আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাতগুলোর সমাধান করতে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’

বাংলাদেশ দুটি বড় ঐতিহাসিক ঘটনা- বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত-বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে দুই দিনব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্স’ এর আয়োজন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই শান্তি সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের থিংক ট্যাংক প্রতিনিধি, লেখক, কবি, সঙ্গীত শিল্পী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভার্চুয়ালি ও সশরীরে যোগ দিয়েছেন।  

বর্তমানে বিশ্ব প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ মহামারি ও সংঘাতের মতো বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আমরা একতাবদ্ধ হতে এবং পারস্পরিক শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে না পারব, ততদিন আমরা আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য বিশ্ব নিশ্চিত করতে পারব না। এই বিশ্ব ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে।’


রাষ্ট্রপতি জাতি, বর্ণ ও ধর্মের ভিত্তিক সব ধরনের বৈষম্যের অবসান এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

আবদুল হামিদ বলেন, একই বিশ্বের বাসিন্দা হিসেবে সকল মানুষেরই অভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে এবং বিশ্বের সকল মানুষের জন্য একটি ন্যায্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা জরুরি। 

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি বিশ্বের সর্বত্রই শান্তি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকা আমাদের জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন। শান্তি আমাদেরকে সহিংসতা বা ভীতি থেকে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়।’  

ঢাকায় ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’কে বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কিছু করতে পারলে আমরা আমাদের সেবা দিতে পেরে খুশি হব। আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে এবং কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আছি।’

৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ লাখ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

স্বাধীনতার পরপরই, শান্তির প্রবক্তা বঙ্গবন্ধু একটি সংবিধান প্রবর্তন করেন যা দেশের সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির প্রচার নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও  প্রতি বৈরিতা নয়।’

শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে জুলিও-কুরি শান্তি পুরস্কার প্রদান করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এতে বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হয়েছেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বজুড়ে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা উপস্থাপন করেন এবং বিশ্বব্যাপী বৈষম্যও অবিচার কীভাবে আন্তর্জাতিক শান্তির প্রকৃত হুমকি হয়ে ওঠে তা তুলে ধরেন।

তিনি  যোগ করেন, ‘শান্তির প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ অঙ্গীকার এই উপলব্ধি থেকে জন্ম নিয়েছে যে শুধুমাত্র শান্তির পরিবেশই আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার কষ্টার্জিত সুফল উপভোগ করতে এবং দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, নিরক্ষরতা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সমস্ত শক্তি ও সম্পদকে একত্রিত ও কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম করবে।’

ভাষণের শুরুতে রাষ্ট্রপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন এমন বিদেশি বন্ধুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শান্তি সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ছয় অতিথি বক্তা- জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন, পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট নোবেল বিজয়ী হোসে রামোস-হোর্তা, রাজনীতিবিদ ও ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন, রেলওয়ে, বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু, মিশরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরব লীগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরাম ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক ফেডারেল মন্ত্রী, তান দাতো সেরি সৈয়দ হামিদ আলবার এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতুও উদ্বোধনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি ও সশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন। 

এছাড়া, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্য রাখেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //